অধিদপ্তরের বাইরের পদস্থরা ধরাছোঁয়ার বাইরে

উন্নয়ন ডেস্ক –

দুর্নীতিতে জড়িত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বাইরে পদস্থরা সব সময়ই ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন। বড় কোনো ঘটনা ঘটলে তাদের শুধু বদলি করা হয়। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘটনার তদন্ত না করে শুধু বদলি লোক দেখানো ছাড়া আর কিছুই নেই। তাছাড়া বদলি কোনো শাস্তি হতে পারে না। তাদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে।

একের পর এক কেলেঙ্কারির মধ্যে গত সপ্তাহে বড় খবর ছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পদ থেকে অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের পদত্যাগ। এছাড়া এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়ের সচিব, অতিরিক্ত সচিবসহ কয়েক জনকে বদলি করা হয়েছে। পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. আমিনুল হাসানকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় মাস্ক, পিপিইসহ সুরক্ষাসামগ্রী, যন্ত্রপাতি ক্রয়ে, করোনা পরীক্ষা ও চিকিত্সার নামে সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

কিন্তু মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের (সিএমএসডি) বিদায়ী পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহীদউল্লাহ দুর্নীতিতে জড়িতদের নাম লিখিতভাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে জমা দেন। কিন্তু কাউকে আইনের আওতায় আনা হয়নি। গত ২২ মে কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের (সিএমএসডি) পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহীদউল্লাহকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তার স্থলে বাংলাদেশ জাতীয় ইউনেসকো কমিশনের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল (অতিরিক্ত সচিব) আবু হেনা মোরশেদ জামানকে পদায়ন করা হয়।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ মিডিয়াকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতিতে জড়িত এমন কিছু কর্মকর্তার নাম আমরা পেয়েছি। তদন্ত চলছে। জড়িত সবাইকে ধরা হবে। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন। তদন্তে যাদের দুর্নীতি প্রমাণিত হবে, তাদের ধরা হবে।’ ইকবাল মাহমুদ বলেন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে। এ ব্যাপারে ১১টি মামলাও করা হয়েছে।

বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল বলেন, যারা চুরি করার জন্য দরজা খুলে দিল, তারা কেন আইনের আওতায় আসবে না? স্বাস্থ্য খাতে সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে দুর্নীতিবাজ সবাইকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে। দুর্নীতিতে গ্রেফতারকৃতরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন কারা তাদের মাস্টারমাইন্ড। তিনি বলেন, কোনো ঘটনা ঘটলে জড়িতদের বদলি করা হয়। এটা কোনো শাস্তি নয়, আইওয়াশ। ঘটনার মূল হোতাদের শাস্তি দেওয়ার দাবি জানিয়ে ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল বলেন, স্বাস্থ্য খাতে একের পর এক কেলেঙ্কারির ঘটনায় জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তাই ন্যায়বিচার করতে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

স্বাধীনতা চিকিত্সক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান বলেন, কোনো ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে সম্পৃক্তদের বিচার না হলে দেশে কোনো ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হবে না। দুর্বৃত্তায়নের লালন করা হবে। তিনি বলেন, কাউকে সরিয়ে দেওয়া বা বদলি করা কোনো শাস্তি নয়। জড়িত অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। স্বাধীনতা চিকিত্সক পরিষদের (স্বাচিপ) মহাসচিব ডা. এম এ আজিজ বলেন, স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির কোনো ঘটনা ঘটলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বদলি বা ওএসডি করা হয়। কেউ চাকরি ছেড়ে চলে যায়। তদন্তের মাধ্যমে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। তাহলে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হবে। বদলি কোনো সমাধান নয় বলে জানান তিনি।