উন্নয়ন ডেস্ক –
ঈদের চতুর্থ দিন গতকাল শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় সবচেয়ে বেশি পর্যটকের সমাগম ঘটেছে কক্সবাজারে। এক দিনে অন্তত তিন লাখ পর্যটকে গিজ গিজ করছে বিশ্বের দীর্ঘতম এই সমুদ্রসৈকত। ঈদের ছুটিতে এবার পর্যটকের সংখ্যা বেশি হওয়ার সুযোগে মাঝারি ও নিম্ন মানের আবাসিক হোটেল ও কটেজগুলোতে ভাড়াও বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। সেই সঙ্গে সৈকতে মোবাইল চোরের উপদ্রবও বৃদ্ধি পেয়েছে।
কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের মুখে পড়ছে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির ভ্রমণকারীরা। এ শ্রেণির লোকজন মাঝারি মানের হোটেল-কটেজেই বেশি অবস্থান নিয়ে থাকে। অভিযোগ উঠেছে, সাগরপারের বিলাসবহুল হোটেলগুলোর কক্ষ ভাড়া নির্ধারিত থাকে। নির্ধারিত ভাড়ার মধ্যেও ক্ষেত্রবিশেষে রয়েছে বিশেষ ছাড়।
এসব হোটেলগুলোর বুকিংও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হয়ে থাকে অনলাইনভিত্তিক। এ কারণে এসব পর্যটকের দালালের হাতে পড়তে হয় না। কিন্তু নিম্ন শ্রেণির হোটেল-কটেজগুলোতে কক্ষভাড়া নির্ধারিত থাকে না। আবার ভাড়া নির্ধারিত বলা হলেও তা মানা হয় না। তদুপরি দালালের হাতে পড়েও অনেক পর্যটককে ভাড়ার দ্বিগুণ গুনতে হয়। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (পর্যটন সেল) সৈয়দ মুরাদুল ইসলাম জানিয়েছেন, অতিরিক্ত হোটেল ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তা ছাড়া সৈকতে সংঘবদ্ধ মোবাইল চোর দলের উপদ্রবও বেড়েছে উদ্বেগজনকভাবে। এসব চোরের দলে বেশির ভাগই রয়েছে রোহিঙ্গা। কক্সবাজার জেলা প্রশাসন পরিচালিত সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির নিয়োজিত কর্মী মাহবুবুল আলম মিডিয়ায় বলেন, ‘ আমরা বিচকর্মী, সৈকতে নিয়োজিত উদ্ধারকর্মী এবং ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্যদের হিমশিম খেতে হচ্ছে মোবাইল চোর সিন্ডিকেট নিয়ে। দৈনিক অর্ধশতাধিক চুরির ঘটনা ঘটছে। ’
তিনি জানান, রোহিঙ্গারা এসব কাজে সাংঘাতিক পারদর্শী। সৈকতে ভিড়ের সুযোগেই চোর সিন্ডিকেট সদস্যরা টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয়।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি শেখ মুনীর উল গীয়াস বলেন, ‘সৈকতে রোহিঙ্গা আটকের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মোবাইল চোরের সিন্ডিকেট শনাক্তেরও চেষ্টা করা হচ্ছে। ’
এদিকে সিলেটের পর্যটনকেন্দ্র গুলোতেও পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড়। গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনে হাজার হাজার পর্যটকের পদভারে মুখর ছিল সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাদা পাথর পর্যটন কেন্দ্র। স্থানীয়দের দাবি, অন্তত ৪০ হাজার মানুষ সেখানে ভিড় করেছে। পর্যটকদের অতিরিক্ত উপস্থিতিতে সেখানে নদী পারাপারে দেখা দেয় নৌকা সংকট। ফলে অনেককে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তীরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। আবার পানি কম থাকায় অনেককে হেঁটেই পরিবার নিয়ে দীর্ঘ নদীপথ পাড়ি দিতে দেখা গেছে।
সপ্তাহিক আর ঈদের ছুটি মিলিয়ে লম্বা ছুটিতে বন্ধুদের নিয়ে সিলেট ঘুরতে এসেছেন লক্ষ্মীপুর জেলার রুমেল মাহমুদ। নৌকার আশায় নদীর পারে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা রুমেল একরাশ বিরক্তি নিয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ভোর ৬টায় এসে নদীর তীরে পৌঁছেছি। এখন দুপুর ২টা বাজে। এখনো নৌকার ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। ’ এখন হেঁটেই নদী পাড়ি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন জানিয়ে বললেন, ‘এত দূর এসে এখন মূল স্পটে না গিয়ে তো আর ফিরে যাওয়া যায় না। নদীতে পানি কম। অনেকে হেঁটেই পাড়ি দিচ্ছে। আমরাও পানিতে নেমে পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ’ একই ক্ষোভ জানালেন সিলেট শহরতলীর বরইকান্দি থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা মুকুল আহমদ। তিনি বলেন, ‘দুপুর ১২টা থেকে নৌকার অপেক্ষায় লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। এখন দুপুর ২টা। কোনো আশার আলো দেখছি না। ’
স্থানীয় তরুণ সমাজসেবী কবির আহমদ বলেন, ‘প্রতি ঈদে এবং ছুটির দিনে এখানে বিপুলসংখ্যক মানুষ আসে ঘুরতে। তবে এবার একটু বেশিই মনে হচ্ছে। যেহেতু করোনার কারণে গত দুই বছর অনেকে আসতে পারেনি এবার তাই সংখ্যা যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি মনে হচ্ছে। ’ নৌকা সংকটের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ঘাটে প্রায় দেড় শ নৌকা রয়েছে। কিন্তু সেগুলোতে কুলানো যাচ্ছে না। ’
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুসিকান্ত হাজং বলেন, ‘ঈদের দিন থেকে শনিবার পর্যন্ত চার দিনে লাখখানেক পর্যটক আসবে বলে আমাদের ধারণা ছিল। সে অনুযায়ী আজকে সমাগম বেশিই হয়েছে। ’ ৩০ থেকে ৪০ হাজার মানুষ শুক্রবার সাদা পাথর এসেছে বলে ধারণা করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পর্যটকদের উপস্থিতি বেড়ে যাওয়ায় নৌকার কিছুটা সংকট হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে নৌকা পাওয়া যাচ্ছে না, এমন বলা যাবে না। হয়তো কারো কারো আধ ঘণ্টা বা তার চেয়ে একটু বেশি সময় লাগছে। এরকম সময়ে এটুকু কষ্ট তো হতেই পারে। ’