উন্নয়ন ডেস্ক –
করোনা মহামারি নিয়ে শুরুতে মানুষের মনে এক ধরনের ভয় ও আতঙ্ক কাজ করছিল। ঘর থেকে বের হতো কম। মাস্ক পরা, হাত ধোয়াসহ অন্যান্য নিয়ম-কানুন যথাসম্ভব মেনে চলত। এরই মধ্যে সংক্রমণের পাঁচ মাস কেটে গেছে। করোনা যেন ক্রমেই গা-সওয়া হয়ে যাচ্ছে। মন থেকে ভয় বা আতঙ্কও অনেকটাই কমে গেছে। প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে বাইরে যাচ্ছে। গাদাগাদি করে যানবাহনে চলাচল করছে। অনেকেই মাস্ক পরছে না। মাস্ক না পরার জন্য নানা ধরনের অজুহাত তৈরি করছে। অথচ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি এখনো আগের মতোই রয়ে গেছে। কোনো কোনো এলাকায় করোনা আক্রান্তের হার কিছুটা কমলেও নতুন নতুন এলাকায় আক্রান্তের হার বেড়েও যেতে পারে। তাই এখনো করোনাসংক্রান্ত সতর্কতা ও নিয়ম-কানুন মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই।
ঈদুল আজহার ছুটির আগে সরকার ও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছিল কর্মস্থল বা নিজ নিজ অবস্থান ত্যাগ না করার জন্য। কিন্তু আমরা কী দেখলাম? যানবাহনে, বিশেষ করে লঞ্চে ও বাসে ঘরফেরা মানুষের উপচেপড়া ভিড়। রীতিমতো গাদাগাদি-ঠাসাঠাসি করে মানুষ বাড়ি ফিরেছে। গরুর হাটগুলোতেও দেখেছি মানুষের উপচে পড়া ভিড়। হাটের প্রবেশপথে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখা হলেও কেউ সেদিকে ভ্রুক্ষেপই করছে না। খুব কম মানুষকেই দেখা গেছে মাস্ক পরতে। আমরা জানি না, এর কী মূল্য আমাদের দিতে হতে পারে। করোনা সংক্রমণের প্রথম থেকে বন্ধ থাকলেও সম্প্রতি আত্মীয়-স্বজনের বাসায় বেড়াতে যাওয়ার প্রবণতা অনেক বেড়েছে। শিশু-কিশোররাও এখন দল বেঁধে ঘর থেকে বেরিয়ে আসছে। বাসগুলোতে প্রতি দুই আসনে একজন যাত্রী পরিবহনের বিধান করা হলেও তা প্রায় কেউই মানছে না। করোনা মহামারির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এ ধরনের অবস্থা মোটেও কাম্য নয়।
শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা দুনিয়ায়ই করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। দেশে করোনাভাইরাস বা কভিড-১৯-এ আক্রান্তের সংখ্যা এরই মধ্যে আড়াই লাখ ছাড়িয়েছে। মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিন হাজার তিন শর বেশি। আমাদের পাশের দেশ ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা ২০ লাখ এবং মৃতের সংখ্যা ৪২ হাজার ছাড়িয়েছে। সংক্রমণ ও মৃত্যু উভয় দিক থেকেই বিশ্বে এক নম্বরে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় অর্ধকোটি এবং মৃতের সংখ্যা এক লাখ ৬৪ হাজার ছাড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ না মানার অভিযোগ রয়েছে। অনেকেই মনে করেন, এ কারণেই
যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত ও মৃতের হার এত বেশি। আমরা যেন কোনোমতেই একই রকম ভুল না করি। পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং কঠোর প্রশাসনিক পদক্ষেপের মাধ্যমে সবাইকে নিয়ম-কানুন মানতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।