উন্নয় বার্তা ডেস্ক: মহামারী নভেল করোনাভাইরাসের টিকা সংগ্রহ করার জন্য একটি প্রকল্পের অধীনে সরকার ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, টিকা কেনার জন্য বাজেটে একটি প্রকল্পের আওতায় ৬০০ কোটি টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। অর্থ সচিব বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। কোনো কারণে যদি ফরেন কারেন্সি নাও পাওয়া যায়, আমাদের বাজেটে সেটার সংস্থান রাখা হয়েছে। টিকা কেনার জন্য টাকা-পয়সার কোনো সমস্যা হবে না।
গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান তিনি।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এ বৈঠকে যোগ দেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, জাতীয় সংসদের নবম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী ভাষণ দেয়ার সময় বলেছিলেন, ‘করোনার ভ্যাকসিন তৈরিকারী সব দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করে অর্থ বরাদ্দ করেছি।যেখানে ভ্যাকসিনটি প্রথম পাওয়া যাবে সেখান থেকে সংগ্রহ করা হবে।’ প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনার আলোকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুসরণ করে এ-যাবৎ গৃহীত কার্যক্রমের পাশাপাশি সম্ভাব্য দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সার্বিক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।
তিনি বলেন, চীনের বেসরকারি কোম্পানি সিনোভ্যাক যে টিকা তৈরি করেছে, সেটার থার্ড ট্রায়ালের জন্য আইসিডিডিআর,বি বাংলাদেশ সরকারের কাছে আবেদন জানানোর পর তা অনুমোদন দেয়া হয়েছে সেক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে একটু লেস প্রাইসে (কম দামে) আমরা টিকা পাব। রাশিয়ার ক্যামেলিয়া ন্যাশনাল রিসার্চ সেন্টার স্পুটনিক ভি টিকার প্রযুক্তি বাংলাদেশে হস্তান্তরের জন্য আমাদের অফার দিয়েছে। এটাও বিবেচনায় আছে। এ বিষয়ে রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ চলছে। কিন্তু আমরা কন্ডিশন দিয়েছি, এটির জন্য ডব্লিউএইচওর অনুমোদন লাগবে। আরেকটি হচ্ছে ভারতের বায়োটেক, তারা আমাদের এখানে ট্রায়ালের আগ্রহ দেখিয়েছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ভ্যাকসিন কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছে। ৩৬ জনের প্রশিক্ষণের প্রস্তাব করেছে।
অনলাইনে ওরিয়েন্টেশন এরই মধ্যে শুরু হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ফ্রান্স ও বেলজিয়ামভিত্তিক সানোফি অ্যান্ড জিএসকে প্রোটিন বেইজ টিকার তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল চলছে। দেশের দুটি ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি এটি প্রডিউসের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, কভিড-১৯ সংক্রমণের পর থেকে বিশ্বব্যাপী টিকার জন্য বিভিন্ন দেশ উঠেপড়ে লেগেছে। বিশ্বব্যাপী ৪৬টি করোনা টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়েছে। প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে ৯১টি টিকার।
তিনি বলেন, যারা টিকা তৈরি করছে, শুরু থেকেই আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।আমাদের একটা মানদণ্ড হলো ডব্লিউএইচও যেটা স্বীকৃতি দেবে না, আমরা সেটাকে গ্রহণ করব না। এটাকে মানদণ্ড ধরে আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ডিপার্টমেন্টগুলো এবং আমাদের ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি পার্সোনালি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করছে এখানে উৎপাদনের জন্য। এখানে যে পদক্ষেপ স্বাস্থ্য বিভাগ নিয়েছে, সেটা হলো গত ৪ জুন অনুষ্ঠিত যুক্তরাজ্যের উদ্যোগে লন্ডনে ‘গ্লোবাল ভ্যাকসিন সামিট-২০২০’ অনুষ্ঠিত হয়, এ সামিটে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও বার্তা প্রেরণ করেন। বিশেষ করে গ্যাভির (গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন) পক্ষ থেকে টিকা পাওয়ার যোগ্য দেশ হিসেবে ঘোষণার যে আবেদন জানানো হয়, তা গ্রহণ করা হয়েছে।
টিকা কখন-কবে মার্কেটে আসবে, সেটা সুনির্দিষ্টভাবে কোনো কোম্পানি বলতে পারছে না উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমি যে তালিকাটা দেখলাম, তাতে ২০২১ সালের এপ্রিল-মে-জুনের আগে মার্কেটে আসবে বলে তারা নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। যদি এর আগে সাকসেসফুল হয়ে যায়, তবে ইনশাআল্লাহ সবার সঙ্গেই আমাদের যোগাযোগ আছে।কিছু টেকনিক্যাল বিষয়ও আমাদের দেখতে হচ্ছে। দু-একটা টিকা আছে, যেগুলো মাইনাস ৮০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে। আমাদের মতো দেশে এটা খুব ডিফিকাল্ট। তবে বেশির ভাগই আমাদের দেশের জন্য সুইটেবল, যেগুলো ২ থেকে ৮ ডিগ্রির মধ্যে সংরক্ষণ করতে হয়। প্রথম থেকে টিকা কিনে নেয়ার জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। এজন্য আমাদের পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ দেয়া আছে।
টিকা মানুষকে বিনা মূল্যে দেয়া হবে কিনা, এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, টিকার দামটা এখনো নির্ধারণ করা যায়নি।সবকিছু দেখা যাক। অবশ্যই একটা বড় অংশ বিনা মূল্যে দেয়া হবে। প্রাথমিকভাবে এটা চিন্তাভাবনায় আছে। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিনা পয়সায় টিকা আসার এখনই কোনো সম্ভাবনা নেই, এটা আমাদের বুঝতে হবে।সারা পৃথিবীতে একটা প্রতিযোগিতা চলছে। বিনা পয়সায় এ টিকা পাওয়ার এখনই কোনো সুযোগ নেই। যদি গ্যাভির মাধ্যমে আসে, সেটাও একটু দেরি হবে।
বৈঠকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ দেয়া ভাষণের দিনটিকে মন্ত্রিপরিষদ ঐতিহাসিক দিবস হিসেবে ঘোষণার প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ দিনটি (৭ মার্চ) ঐতিহাসিক দিন সবাই জানেন।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৃঢ় বলিষ্ঠ নেতৃত্বের নির্দেশনা ও জাতীয় জাগরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দেয়া ভাষণে। এ ভাষণের নির্দেশনার আলোকে এ দেশের জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এটার আন্তর্জাতিক গুরুত্বও আছে। ইউনেস্কো এ ভাষণটিকে ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্ত করেছে।
তিনি বলেন, সেই বিবেচনায় জাতীয় জাগরণ ও স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম প্রেরণার উৎস হিসেবে দিবসটি উদযাপন করার বিষয়টি খুবই প্রাসঙ্গিক। মন্ত্রিপরিষদে প্রস্তাব হিসেবে নিয়ে আসা হয়েছে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এ প্রস্তাবটা দিয়েছে।
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে সঠিকভাবে উপস্থাপন ও তাত্পর্য তুলে ধরাইহলো দিবসটি পালনের যৌক্তিকতা। দিবসটি উদযাপনের মাধ্যমে দেশের জনগণের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপূর্ণ বিকাশ লালন-পালন ও যথাযথ চর্চা করা সম্ভব হবে। সব শিক্ষার্থী ও মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পরিপূর্ণ সংস্থাপন করার প্রয়াস বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। এদিন কোনো ছুটি থাকবে না। সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর, সংস্থা দিবসটি তাদের নিজস্ব কর্মসূচির মাধ্যমে উদযাপন ও বাস্তবায়ন করবে।