কিশোরগঞ্জে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত, দিশেহারা মানুষ

উন্নয়ন ডেস্ক –

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে কিশোরগঞ্জের হাওরের ৮টি উপজেলার ৩০টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। রোববার দুপুর পর্যন্ত হাওর এলাকার বিভিন্ন নদ-নদীর পানি উপচে প্লাবিত হয়েছে হাট-বাজার এবং আশ্রয় কেন্দ্রগুলো। ইতোমধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্গত এলাকার মানুষদের আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, ইটনা উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন, মিঠামইনের ৭টি ইউনিয়নের সবকটি, অষ্টগ্রামের ২টি, নিকলীর তিনটি, করিমগঞ্জের ছয়টি ও তাড়াইল উপজেলার পাঁচটি ও বাজিতপুরের একটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ও হাট-বাজারে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। দুর্গত এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখার পাশাপাশি দুর্গতদের আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যা প্লাবিত গ্রামে চাল বরাদ্দ করে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি গবাদিপশুদেরও খাদ্য ও আশ্রয় সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

নিকলী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবু হাসান জানান, ইতিমধ্যেই উপজেলার কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ছাতিরচর, সিংপুর, দামপাড়া ইউনিয়ন । তিনি আরও বলেন, সিলেট ও সুনামগঞ্জসহ গোটা হাওরে যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে এভাবে চলতে থাকলে নিকলী উপজেলার অধিকাংশ এলাকা তলিয়ে যাবে।

কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মতিউর রহমান জানান, কিশোরগঞ্জ হাওরের উপর প্রবাহিত বিভিন্ন নদ-নদীর পানি গত ২৪ ঘণ্টায় এক ফুট বেড়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে অবস্থার আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে, রোববার সকাল থেকে রোদ্র আবহাওয়ার কারণে বনার্ত মানুষ কিছুটা আশার আলো দেখছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম জানান, বন্যা পরিস্থিতি সরেজমিনে পরিদর্শন করতে উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের নিয়ে হাওর অঞ্চল ঘুরে দেখেছেন। তিনি আরও জানান, অনেক এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। সেখানকার লোকজনকে আশ্রয়য়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে। সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত দুই হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, ১৪৪ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ।

জেলা প্রশাসক বলেন, জেলার মোট ৮টি উপজেলায় বন্যার পানি বেড়েই চলছে। সেদিকে প্রশাসনের নজর রয়েছে। ঢলের পানি ও বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। এ ব্যাপারে হাওর অধূষ্যিত উপজেলাসহ সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে হাওরের চার উপজেলার প্রতি সর্তক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। কারণ আর দুই/তিন ফিট পানি বৃদ্ধি পেলে বন্যার পানির তোড়ে হাজার হাজার মানুষের সর্বনাশ হয়ে যাবে।

১৫ গ্রামের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন

বন্যার পানি বেড়ে যাওয়ায় কিশোরগঞ্জের ১৫ গ্রামের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে শনিবার রাত থেকে সাময়িকভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ।

শনিবার রাতে কিশোরগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বন্যার কারণে কিশোরগঞ্জের দুইটি উপজেলার ১৫টি গ্রামের বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, ১৫ টি গ্রামে ১০ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। পানি কমে গেলেই আবার বিদ্যুৎলাইন চালু করা হবে।

কিশোরগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি অফিস সূত্রে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ ও ইটনা হাওরে পানি বেড়ে যাওয়ায় চৌগাংগা ও নিয়ামতপুর অফিসের আওতাধীন শান্তিপুর, চারিতলা, বালিয়াপাড়া, খাকশ্রী, সুতারপাড়া, বালিখলা, পাঁচকাহনিয়া, বড়িবাড়ি, এনসহিলা, দিয়ারকান্দি, বাদলা, কুর্শি, শিমুলবাঁক, টিয়ারকোণা ও চং নোয়াগাঁও এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের ক্লিয়ারেন্স কমে যাওয়ার নিরাপত্তার স্বার্থে শনিবার রাত থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।