ঘরে ধান তুলতে নদীতে বাঁশের সাঁকো

উন্নয়ন ডেস্ক –
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে আবাদী জমির ধান বাড়িতে আনতে বংশাই নদীর তরফপুর এলাকায় বাঁশের সাকো নির্মাণ করছেন এলাকার কৃষকরা। নদীতে পানি আসায় ওই এলাকার কৃষক এই উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানা গেছে। বংশাই নদীর ওই এলাকায় বেইলি ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
জানা গেছে, চলতি বছর মির্জাপুর উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়নে প্রায় ২১ হাজার হেক্টর (প্রায় ৫২ লাখ একর) জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে।
এ বছর উজানের ঢলে মির্জাপুর উপজেলার লতিফপুর, ফতেপুর ও আজগানা ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হেক্টর জমির ধান পানিতে তলিয়ে যায়। এর মধ্যে প্রায় ১৫ হেক্টর জমির ধান পুরো নষ্ট হয়ে গেছে। বাকি ৩৫ একর জমির পানি নেমে গেছে।
তরফপুর ইউনিয়নের উপর দিয়ে বংশাই নদী প্রবাহিত হয়েছে। বংশাই নদীর উত্তরপাশে তরফপুর গ্রামের দুই শতাধিক কৃষক প্রতি বছর প্রায় ১৫শ একর জমিতে বোরো আবাদ করে থাকেন। এবছরও করেছেন। ৯টি মেশিন দিয়ে এসব জমিতে পানি দেয়া হয়েছে। ফলনও খুব ভালো হয়েছে। জমির ধান পাকতে শুরু করেছে। কিছু কিছু জমির ধান কাটাও হচ্ছে। কিন্তু নদীতে পানি আসায় চিন্তিত কৃষক। ওই এলাকায় একটি মাত্র নৌকা রয়েছে। সেতু না থাকায় ওই নৌকায় পার করা হচ্ছে ধান। এতে এক একর জমির ধান পার করতে কৃষককে ১ হাজার ৮০০ টাকা দিতে হচ্ছে। এতে দিনমজুরের সময় অপচয় ও অতিরিক্ত টাকা খরচ হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক। আগামী এক সপ্তাহ পর পুরোদমে ওই এলাকার ধান কাটা শুরু হবে। এতে একটি মাত্র নৌকাতে পারাপারে কৃষকের বিপাকে পড়তে হবে। এ কথা চিন্তা করে এলাকার কৃষকরা তাদের নিজ উদ্যোগে ওই এলাকায় একটি বাঁশের সাকো তৈরি করছেন। তবে নদীতে স্রোত শুরু হলে বাঁশের সাঁকোটি থাকবে কিনা তা নিয়েও কৃষক চিন্তিত বলে জানিয়েছেন।
তরফপুর গ্রামের আক্কাস আলী ২ একর, শামীম আল মামুন ৩ একর, নুরু মিয়া ৪ একর, মতিয়ার রহমান ২ একর, শফিকুল ইসলাম ৫ একর, রাজ্জাক মিয়া ১ একর, মুক্তার হোসেন ২৫০ শতাংশ-সহ তরফপুর গ্রামের দুই শতাধিক কৃষক প্রায় ১৫শ একর জমিতে বোরো আবাদ করেছেন।
তারা জানান, প্রতি একর জমির ধান পার করতে নৌকার মাঝিকে ১ হাজার ৮০০ টাকা দিতে হচ্ছে। তাও আবার অপেক্ষায় থাকতে হয়। এতে দিনমজুরের সময় অপচয় হচ্ছে। আগামী এক সপ্তাহ পর ওই এলাকার জমির ধান পুরোদমে কাটা শুরু হবে। এতে পারাপারে দিনমজুরকে ভোগান্তিতে পড়তে হবে। এ কথা চিন্তা করে এলাকার সকল কৃষক যৌথভাবে বাঁশের সাকো তৈরি করছেন। তবে নদীতে স্রোত আসলে সাঁকোটি থাকবে কিনা তা বলা যাচ্ছে না।
সাদেক মিয়া জানান, তার নিজের ৬ একর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। তাছাড়া তার একটি মেশিন রয়েছে। ওই মেশিন দিয়ে নিজের জমিসহ প্রায় ১১ একর জমিতে পানি দেওয়া হয়েছে। কৃষকের ৫ একর জমির আবাদকৃত ধানের চার ভাগের এক ভাগ পানির খরচ হিসেবে কৃষক আমাকে দেবে। ধানগুলো বাড়িতে আনতে পারবেন কিনা তা নিয়ে চিন্তিত বলে তিনি জানান।
তরফপুর গ্রামের আক্কাস আলী, মুক্তার, রাজ্জাক ও সাদেক মিয়া বলেন, তরফপুর ইউনিয়নের কৃষক বোরো ধানের ওপর নির্ভরশীল। নদী পারাপারের ব্যবস্থা না থাকায় প্রতি বছর বোরো মৌসুমে এ এলাকার কৃষকদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। এ বছর নদীতে আগাম পানি আসায় চিন্তিত কৃষক। সময়মত কৃষক তাদের ধান ঘরে তুলতে না পারলে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবে। আমরা খান আহমেদ শুভ এমপি’র কাছে বংশাই নদীর ওই এলাকায় একটি বেইলি সেতু নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।
নৌকার মাঝি আক্কাস আলী বলেন, এ বয়সে নৌকা চালাতে খুব কষ্ট হয়। নিজের আবাদকৃত জমির ধান আনার জন্য নৌকা চালাই। এরপর এলাকার কৃষকের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে নৌকায় ধান পার করে থাকি। এজন্য ৫৬ শতাংশ জমির ধান পার করতে ১০০০ টাকা নিয়ে থাকেন।
মির্জাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার পাল জানান, উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হেক্টর জমির ধান তলিয়ে গেলেও ৩৫ হেক্টর জমির পানি নেমে গেছে। আগামী মাসিক সভায় উপজেলার থলপাড়া ও ভলুয়া খালে স্লুইস গেট এবং তরফপুর এলাকায় একটি বেইলি ব্রিজ নির্মাণের জন্য প্রস্তাব করা হবে।