চার মাসেও লক্ষণ নেই কোনো উন্নতির

উন্নয়ন ডেস্ক –

জুলাই ০৯, ২০২০

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংমক্রণ শনাক্তের চার মাস পূর্ণ হয়েছে গতকাল। এরই মধ্যে উত্পত্তিস্থল চীন কিংবা ইউরোপের ব্রিটেন, ইতালি, ফ্রান্স, স্পেনের মতো অনেক দেশ করোনাভাইরাসের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে আনতে সমর্থ হয়েছে। তবে বাংলাদেশে ভাইরাসটির সংক্রমণে সৃষ্ট কভিড-১৯-এ শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা এখন পর্যন্ত ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে।

গত ৮ মার্চ সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এক সংবাদ সম্মেলনে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তি শনাক্তের ঘোষণা দেয়। সংক্রমণের ব্যাপ্তি ঠেকাতে ২৬ মার্চ সারা দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। কয়েক দফায় এর মেয়াদ বাড়ানোর পর গত জুন থেকে আবার পর্যায়ক্রমে সাধারণের চলাচল উন্মুক্ত করা হয়।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত বুলেটিনে গতকাল জানানো হয়, করোনা সংক্রমণের রেকর্ড করা হয়েছে ৩ হাজার ৪৮৯ ও মৃত্যু হয়েছে ৪৬ জনের। এদিন সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৭৮৬ জন। এ নিয়ে দেশে মোট করোনা শনাক্ত হয়েছেন ১ লাখ ৭২ হাজার ১৩৪ জন, মৃত্যুবরণ করেছেন ২ হাজার ২৯৭ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৮০ হাজার ৮৩৮ জন।

বিশ্বে এই ভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ শুরু হয়েছিল চীনে। ঠিক কবে এ সংক্রমণ শুরু হয় তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেয়া তথ্যমতে চীনে এই ভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত রেকর্ড করা হয় গত ডিসেম্বরের ৮ তারিখ। সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী, চীনে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৮৩ হাজার ৫৭২ জন, যার বিপরীতে মৃতের সংখ্যা রেকর্ড করা হয়েছে ৪ হাজার ৬৩৪। তবে ঠিক চার মাস পূর্তির একদিন আগে চীন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুসংখ্যা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনে।

এপ্রিলের ৭ তারিখে চীন এ ঘোষণা দেয়ার পর পরিস্থিতি দুই-একবার ওঠানামা করলেও বড় ধরনের সংক্রমণ কিংবা মৃত্যুর ঘটনা আর ঘটেনি। এরপর ধীরে ধীরে সচল হতে থাকে চীনের পরিস্থিতি। সর্বশেষ গতকাল চীনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সাতজন রোগীর সন্ধান মিললেও নেই কোনো মৃত্যু। সংক্রমণের প্রথম চার মাসের মধ্যে সংক্রমণ ও মৃত্যু নিয়ন্ত্রণে এনেছে চীন। এমনকি সংক্রমণের দ্বিতীয় প্রবাহও সম্প্রতি কাটিয়ে উঠেছে বলে দাবি করছে দেশটি। মহামারীর ধাক্কা সামলে ব্যবসা-বাণিজ্য হয়েছে সচল।

এদিকে ইউরোপে করোনার প্রথম সংক্রমণ শুরু হয় ফ্রান্সে। ২৫ জানুয়ারি প্যারিস ও এর আশপাশে তিন রোগীর সন্ধান পায় দেশটি। এরপর ৩০ জানুয়ারি ব্রিটেন, ৩১ জানুয়ারি ইতালি ও ১ ফেব্রুয়ারি স্পেনসহ সারা ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস।

যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যমতে, যুক্তরাজ্যে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২ লাখ ৮৬ হাজার ৩৪৯ ও মৃত্যু ৪৪ হাজার ৩৯১, ইতালিতে শনাক্ত ২ লাখ ৪২ হাজার ৯৫৬ ও মৃত্যু ৩৪ হাজার ৮৯৯, ফ্রান্সে শনাক্ত ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮১০ ও মৃত্যু ২৯ হাজার ৯৩৩ এবং স্পেনে শনাক্ত ২ লাখ ৯৯ হাজার ২১০ ও মৃত্যু হয়েছে ২৪ হাজার ৩৯২ জনের।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গতকাল ব্রিটেন, ইতালি, ফ্রান্স ও স্পেনে এই ভাইরাসে কেউ আক্রান্ত ও মারা যাননি। এই দেশগুলো আক্রান্তের দুই থেকে তিন মাসের মধ্যেই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়। অথচ প্রথম রোগী শনাক্তের চার মাস পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশের পরিস্থিতির এখনো তেমন কোনো উন্নতি নেই।

চলতি সপ্তাহের এক পর্যালোচনায় জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি এখন নিচের দিকে নামতে শুরু করতে পারে। বিশ্বে সংক্রমণের শীর্ষে থাকা ২০টি দেশের তথ্য পর্যালোচনা করে এ তথ্য দেয়া হয়েছে।