উন্নয়ন ডেস্ক –
‘সান্ধ্য কোর্স’ বন্ধের নির্দেশনার পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) নাম পাল্টে ‘উইকেন্ড কোর্স’ নামে চালানো হচ্ছে। জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান ‘উইকেন্ড কোর্স’ একাডেমিক কাউন্সিলে অনুমোদন করা হয়নি। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ কমিটির সভায় কর্মকর্তাদের সম্মানী নির্ধারণ করে এবং পরে সিন্ডিকেট সভায় আলোচনা করে এ কোর্স অনুমোদন করা হয়।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো শিক্ষা কার্যক্রম ও এ সংক্রান্ত নীতিমালা একাডেমিক কাউন্সিল কর্তৃক অনুমোদন করা বাধ্যতামূলক বলে জানা গেছে। ফলে জাবিতে অবৈধভাবে ‘উইকেন্ড কোর্স’ চলছে বলে দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘উইকেন্ড প্রোগ্রাম অর্ডিন্যান্স-২০১৬’ নামে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলে নীতিমালাটি পাস করা হয়নি। এ নীতিমালার শেষ প্যারাতে বলা হয়েছিল, অর্থ কমিটি ও সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের সম্মানী দেওয়া যাবে।
পরে ২০১৮ সালের ৫ ও ৬ জুন অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় ‘উইকেন্ড কোর্স’ নিয়ে আলোচনা করা হয়। তবে অর্থ কমিটির সভার মাধ্যমে এ কোর্সের আয় থেকে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সম্মানী নির্ধারণ না করায় সেদিন সিন্ডিকেট সভায় এটি অনুমোদন করা হয়নি। পরে শীর্ষ কর্মকর্তাদের সম্মানী নির্ধারণ করে একই বছরের ৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় বিবিধ আলোচনায় রেখে এ কোর্স ‘এক তরফাভাবে’ অনুমোদন দেন সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যসহ উপাচার্যবিরোধী শিক্ষকরা এ সিন্ডিকেট সভা বর্জন করেছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাডেমিক কাউন্সিলের একাধিক সদস্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলে ‘উইকেন্ড কোর্স‘ অনুমোদন করা হয়নি। এ ছাড়া, এ কোর্সের কোনো আইনগত ভিত্তি নেই, সেহেতু ‘উইকেন্ড কোর্স’ থেকে লাখ লাখ টাকা পারিশ্রমিক নেওয়া অবৈধ এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১১ সালে একটি ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে এই কোর্স চালু হলেও এখন তা চলছে ১৮টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে। সাধারণত এক বছরে তিনটি সেমিস্টারে সাপ্তাহিক এসব কোর্সের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দেয় বিভাগগুলো। তবে ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) ও ইংরেজি বিভাগ দুই বছরের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দেয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে ‘উইকেন্ড কোর্স’ ১০ মাস থেকে দুই বছরের মধ্যে শেষ হয়। এসব কোর্সের ফি ৮০ হাজার থেকে শুরু করে আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ের উইকেন্ড কোর্সের নীতিমালা অনুযায়ী, এসব কোর্স থেকে মোট আয়ের ৫০ শতাংশ অর্থ কোর্স পড়ানোর সম্মানী হিসেবে শিক্ষকেরা নিয়ে থাকেন। এছাড়া ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ অর্থ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, ছাত্রদের কল্যাণ, গবেষণা এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যয় করা হয়।
জানা যায়, উইকেন্ড কোর্সের আয় থেকে সম্মানী হিসেবে উপাচার্য মাসে ৫০ হাজার, সহ-উপাচার্য ৪০ হাজার, কোষাধ্যক্ষ ৩৫ হাজার ও রেজিস্ট্রার ২৫ হাজার টাকা পান। এদিকে ১৬টি আবাসিক হলের প্রাধ্যক্ষরা পান ২ হাজার ৪০০ টাকা করে। এ ছাড়া, ফলাফল প্রকাশ, সনদ, ট্রান্সক্রিপ্ট প্রদানসহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য কাজের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাসে ৫ হাজার ৬০০ টাকা, উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ৩ হাজার ২০০, সহকারী নিয়ন্ত্রক ও অন্যরা ১ হাজার ৭০০ টাকা করে পান।
এ ছাড়া তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী ও পিয়নরা পান ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত। সর্বশেষ এ কোর্সের আয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের একান্ত সচিব সানোয়ার হোসেনকে মাসে ১ হাজার টাকা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গত ১২ জুন অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিন্ডিকেট সদস্য।
‘উইকেন্ড কোর্স’ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে অধ্যয়নরত নিয়মিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। তাদের অভিযোগ, বাণিজ্যিক উদ্দেশে চালু হওয়া এসব কোর্সের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা ও গবেষণার কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। কিছু শিক্ষক নিয়মিত শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা নেন না।
এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নুরুল আলম মিডিয়াকে বলেন, ‘আমার যতটুকু মনে পড়ে, উইকেন্ড প্রোগ্রাম অর্ডিন্যান্স একাডেমিক কাউন্সিলে পাস করা হয়েছে। তা না হলে কোর্স চালু করতে পারার কথা না। যেহেতু শিক্ষা বিষয়ক কোর্স, সেহেতু একাডেমিক কাউন্সিল হয়ে আসার কথা। সেটি না জেনে বলতে পারছি না। তবে এ বিষয়ে সাবেক উপাচার্য ভালো জানবেন।’