দ্রুত পদোন্নতি চান প্রশাসনে একীভূত হওয়া ইকোনমিক ক্যাডাররা

উন্নয়ন ডেস্ক –

প্রায় দু’বছর আগে ইকোনমিক ক্যাডার বিলুপ্ত করে প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে একীভূত করা হলেও পদমর্যাদার সমন্বয় করা হয়নি। দেয়া হয়নি প্রাপ্য পদোন্নতিও। ফলে ৫৩২টি পদে বিলুপ্ত এ ক্যাডারের কর্মকর্তারা যে প্রত্যাশা নিয়ে প্রশাসন ক্যাডারে একীভূত হয়েছেন তার কোনো সুফল তারা এখনও পাননি। তাদের কোনো ব্যাচের কর্মকর্তারা প্রায় ১১ বছর ধরে একই পদে পড়ে আছেন।

আবার বিলুপ্ত এ ক্যাডারের যেসব কর্মকর্তা অপশন দিয়ে এর আগে উপসচিব হয়েছেন তারাও সহসা পদোন্নতির মুখ দেখছেন না। ৬ ব্যাচ জুনিয়রের সঙ্গে উপসচিব হয়েও তারা একই পদের ঘানি টানছেন। এ রকম অভিযোগ আর আক্ষেপের অন্ত নেই ভুক্তভোগীদের মধ্যে।

সংশ্লিষ্টরা মিডিয়াকে জানিয়েছেন, অনেকটা বিলম্ব হলেও এ সপ্তাহে শুরু হওয়া এসএসবির (পদোন্নতি সংক্রান্ত সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড) বৈঠকে তাদের বিষয়টি এজেন্ডাভুক্ত করা হয়েছে। এতে তারা কিছুটা আশার আলো দেখছেন। ইতোমধ্যে ১৫তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে ১৯ জুলাই এসএসবির সভাপতি ও মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে লিখিত আবেদন জানানো হয়েছে। এতে মূল বক্তব্য হিসেবে বলা হয়, তাদের ব্যাচের ২৯ কর্মকর্তা ১৯৯৫ সালের ১৫ নভেম্বর চাকরিতে যোগদান করেন।

১ জন চাকরি ছেড়েছেন। ৯ জন অপশন দিয়ে উপসচিব হিসেবে সরকারের প্রশাসন সার্ভিস পুলে যোগ দিয়েছেন, যাদের কেউ কেউ যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। এছাড়া তাদের ক্যাডার নিয়ন্ত্রণকারী দফতর থেকে পদোন্নতি পেয়ে ৩ কর্মকর্তা যুগ্ম সচিবের পদমর্যাদাসম্পন্ন পদ যুগ্মপ্রধান পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। কিন্তু অবশিষ্ট ১৬ কর্মকর্তার ভাগ্যের চাকা থেমে গেছে। বেতন স্কেল চতুর্থ গ্রেডে উন্নীত হওয়া সত্ত্বেও তারা ১০ বছরের বেশি সময় ধরে উপপ্রধান পদে পড়ে আছেন।

পদোন্নতির এই জট থেকে তারা নিষ্কৃতি চান। তারা বলেন, প্রশাসন ক্যাডারের ১৫তম ব্যাচ তো অনেক আগেই যুগ্ম সচিবের খাতায় নাম লিখিয়েছে। উপরন্তু ইতোমধ্যে ১৭ ও ১৮তম ব্যাচকেও যুগ্ম সচিব করা হয়েছে। এ বিবেচনায় তারা অনেক পেছনে পড়ে আছেন।

বিলুপ্ত ইকোনমিক ক্যাডারের কয়েক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, আমরা শুনতে পারছি চলমান এসএসবিতে উপপ্রধানদের পদোন্নতির মাধ্যমে এখন উপসচিব করা হবে। এরপর ভবিষ্যতে তাদেরকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির জন্য বিবেচনায় নেয়া হবে। কিন্তু সেটি হলে তারা যেমন ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হবেন, তেমনি প্রাপ্য সুবিধা পেতে তাদের আরও অপেক্ষার প্রহর গুনতে হবে। কেননা এ রকম কিছু হলে আগামী বছর যখন প্রশাসন ক্যাডারের ২০তম ব্যাচকে যুগ্ম সচিব হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হবে, তখন তাদেরকে বিবেচনায় নেয়া হতে পারে। বাস্তবে সে রকম কিছু হলে প্রশাসন ক্যাডারে একীভূত হওয়ার মূল লক্ষ্য বিচ্যুত হবে। সমব্যাচের সঙ্গে সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হবে না।

তবে তারা এখনই আশাহত হতে চান না। তারা মনে করেন, নিশ্চয় তাদের যৌক্তিক বিষয়গুলো সরকারের নীতিনির্ধারক মহলসহ এসএসবির সদস্যরা গুরুত্বের সঙ্গে পুনর্বিবেচনা করবেন।

প্রসঙ্গত, অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ইকোনমিক ক্যাডার বিলুপ্ত করে প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে একীভূত করা হয়। তবে বিলুপ্তির প্রজ্ঞাপন জারির পরেও পূর্বের নিয়মে ইকোনমিক ক্যাডারের শূন্য পদে প্রায় ১ বছর ধরে ক্যাডারের পদোন্নতির ধারা অব্যাহত রাখা হয়। কিন্তু ভবিষ্যতে আইনি জটিলতা তৈরি হবে বলে পরবর্তীতে সেটি বন্ধ করে দেয়া হয়।

ইতোমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পিএসিসি শাখার ডাটাবেজে বিলুপ্ত ইকোনমিক ক্যাডারে কর্মরত ৪৫৬ কর্মকর্তার আইডি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাদের বিদ্যমান আইডি নম্বরের আগে ২০ যুক্ত করে দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ কোনো আইডির শুরুতে ২০ দেখলে ধরে নিতে হবে তারা ইকোনমিক ক্যাডার থেকে একীভূত হওয়া কর্মকর্তা। যেমন আদার্স ক্যাডার থেকে অপশন দিয়ে আসা কর্মকর্তাদের আইডির আগে ৭ থাকে।