ক্রীড়া প্রতিবেদক:
মাশরাফি বিন মর্তুজা অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটলো।
শুক্রবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচে শেষবারের মতো নেতৃত্ব দেবেন ওয়ানডে অধিনায়ক নড়াইল এক্সপ্রেস।
কিংবদন্তি এই ক্রিকেটার বলেন, অধিনায়ক হিসেবে আমার শেষ ম্যাচ কাল। শুক্রবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ খেলেই তিনি নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়াবেন। তবে অবসর প্রসঙ্গে সরাসরি কিছু জানাননি তিনি।
অধিনায়কত্ব ছাড়লেও নির্বাচকরা দলে রাখলে খেলে যাবেন বলে জানালেন নড়াইল এক্সপ্রেস নামে পরিচিত এই অলরাউন্ডার।
মাশরাফি বিন মর্তুজা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘প্রফেশনালি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি। আমি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়কত্ব থেকে সরে যাচ্ছি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটি অধিনায়ক হিসেবে আমার শেষ ম্যাচ। অধিনায়কের দায়িত্বটা সবসময় চ্যালেঞ্জিং। চেষ্টা করেছি দলকে সর্বোচ্চটা দেওয়ার। আশা করি- সামনে যাকে অধিনায়ক করা হবে তাকে ২০২৩ বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হবে।’
বিদায় বেলায় সতীর্থদের উদ্দেশে ম্যাশ বলেন, ‘আমি আমার পরিবারের সদস্যদের যেমন ভালোবাসি, শ্রদ্ধা করি সতীর্থদেরও তেমনই ভালোবাসি আর শ্রদ্ধা করি। ভবিষ্যতেও তাদের প্রতি ভালোবাসা থাকবে। তাদের জন্য সবসময়ই শুভকামনা থাকবে আমার।’
নেতা মাশরাফি তার শেষ ম্যাচটি খেলার আগে কিছুটা আবেগ প্রবণও থাকলেন। বলছিলেন, ‘আমি সবসময় চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করি। আপনি যদি ঘুম থেকে উঠে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সবকিছু রেডি পান তাহলে তো আর আপনার কোনো কিছু করার আকাঙ্ক্ষা থাকে না। চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করি আমি। আমার প্রতি এত দীর্ঘ সময় আস্থা রাখার জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে ধন্যবাদ জানাই। আমার নেতৃত্বে যত ক্রিকেটার খেলেছে বাংলাদেশ দলে, সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। আমি নিশ্চিত এই প্রক্রিয়াটা সহজ ছিল না- গত ৪-৫ বছরে ভ্রমণ সহজ ছিল না।’
তবে অধিনায়কত্বের ইতি টানার আগে অভিমানের মেঘও জমেছিল মনে। মাশরাফি বলেন, ‘একটা মানুষকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য অন্তত কিছুটা সময় দেওয়া উচিত। ১৫ বছর ধরে এটা আমার জীবনের অংশ। আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অংশ। আমার যত অর্জন বা জীবনে যা কিছু করেছি সব এ খেলা দিয়ে। আমার জীবনের অন্যতম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ এটা। ফলে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে চাইলে আমার সময় দরকার হতো।’
এটিই যে অধিনায়ক মাশরাফির শেষ সিরিজ তেমন ইঙ্গিতটা আগেই ছিল। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) প্রধান নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘খুব শিগগিরই আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সামনে যে বিশ্বকাপটা আছে সেটার জন্য আমরা দল ও অধিনায়ক দুই বছর আগেই করে ফেলব। খুব শিগগিরই এ সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
যদিও এরপর দৃশ্যপট পাল্টায়। এপ্রিলে পাকিস্তান সফরে মাশরাফির নেতৃত্বে ওয়ানডে সিরিজে খেলার সম্ভাবনা তৈরি হয়। কিন্তু সেই সম্ভাবনার ইতি টানলেন খোদ ক্যাপ্টেন। বৃহস্পতিবার সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়ে রাখলেন, শুক্রবারই শেষবারের মতো অধিনায়ক হিসেবে জাতীয় দলে দেখা যাবে তাকে।
সেই ২০১৪ থেকে ওয়ানডে দলকে নিয়মিত নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। এরপর নিয়মিত অধিনায়ক হয়ে ৮০টি একদিনের ম্যাচ খেলে দলকে এনে দিয়েছেন ৪৬টি জয়। সব মিলিয়ে ৮৭ ম্যাচে তার নেতৃত্বে সর্বোচ্চ ৪৯টি ওয়ানডে ম্যাচে জিতেছে টাইগাররা।
সত্যিকার অর্থে ৩৬ বছর বয়সী মাশরাফির নেতৃত্বেই ওয়ানডেতে শক্ত অবস্থান করে নিয়েছে বাংলাদেশ দল। তার অধিনায়কত্বে ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার-ফাইনালে খেলেছে টাইগাররা। ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে দল উঠে সেমি-ফাইনালে।
ভারত, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে ওয়ানডে সিরিজেও ম্যাশের নেতৃত্বে হারিয়েছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। #