উন্নয়ন ডেস্ক –
ঈদের ছুটি শেষে গতকাল শুক্রবার রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার কর্মস্থলমুখী যাত্রীর ঢল নামে মাদারীপুরে শিবচরের বাংলাবাজার এবং রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া লঞ্চ ও ফেরিঘাটে। ফেরিঘাটে যানবাহনের চাপও ছিল। স্পিডবোটেও প্রচুর যাত্রী পদ্মা নদী পাড়ি দেয়। বাংলাবাজারে মোটরসাইকেলের প্রচণ্ড চাপ থাকায় সেখানকার ৬ নম্বর ফেরিঘাটটি মোটরসাইকেলের জন্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
এ প্রতিবেদন লেখার সময় বাংলাবাজার থেকে পাঁচটি ফেরি শুধু মোটরসাইকেল নিয়ে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের শিমুলিয়া ঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
এদিকে ধারণক্ষমতার কয়েক গুণ যাত্রী টানছে বরিশালের লঞ্চগুলো। বরগুনা নদীবন্দর ও আমতলী লঞ্চঘাট থেকে গতকাল পাঁচটি লঞ্চ ধারণক্ষমতার দুই গুণের বেশি কর্মস্থলমুখী যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যায়। ভোলার ইলিশা ঘাটেও যাত্রীদের ঢল নামে। লঞ্চগুলো ধারণক্ষমতার বেশি যাত্রী নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। সকাল থেকে মানুষের ভিড় দেখা যায় পিরোজপুরের বাস টার্মিনালে।
ঈদের পর গতকালই প্রথম ট্রেনে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। ঢাকায় আসতে বিভিন্ন স্টেশনে ট্রেনের টিকিট পেতে মানুষকে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়। ট্রেনে গাদাগাদি করে যাত্রীরা ঢাকায় ফেরে। তবে বেশির ভাগ ট্রেন সময়মতো স্টেশন ছেড়েছে। গতকাল শুধু কয়েকটি ট্রেন আধাঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা দেরিতে ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছায়। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক মাসুদ সরওয়ার কালের কণ্ঠকে বলেন, ঢাকামুখী যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। শনি ও রবিবার চাপ আরো বাড়বে। ঢাকা স্টেশনে টিকিট ছাড়া যাত্রীর সংখ্যা কম। যারা টিকিট ছাড়া জেলা ভ্রমণ করেছে তারা কমলাপুরের আগেই নেমে যায়।
কেউই নিয়ম মানছে না
বরিশাল নৌবন্দর ভবনের দ্বিতীয় তলায় বিআইডাব্লিউটিএ নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে বিকেল ৫টা থেকে মাইকে ঘোষণা দেওয়া হচ্ছিল, ‘সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে উঠবেন না। ’ বিভিন্ন লঞ্চের নাম ধরে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল, ‘তৃতীয় তলার হুইল রুমের (মাস্টার কক্ষ) সামনে যাত্রীদের ভিড় দেখা যাচ্ছে। ওই সব স্থানে যাত্রী ওঠানো নিষিদ্ধ। দয়া করে সংরক্ষিত এলাকা থেকে যাত্রী নামিয়ে দিন। না হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’
তবে বৃথা যায় এ ঘোষণা। যাত্রী, লঞ্চ কর্তৃপক্ষ—কেউই নিয়ম মানছিল না। লঞ্চগুলোর খালাসিরা (শ্রমিক) ‘জায়গা খালি আছে’ স্লোগান দিয়ে যাত্রীদের লঞ্চে ওঠাচ্ছিল। বিকেল ৫টার মধ্যে বরিশাল ঘাটে নোঙর করা সব লঞ্চই যাত্রীতে টইটম্বুর হওয়ার পরও যাত্রী ওঠাচ্ছিল লঞ্চ ছাড়ার আগ পর্যন্ত। তবে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই রোধে প্রশাসনিক তেমন তৎপরতা চোখে পড়েনি। রাত ৮টার পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের একটি টিম গিয়ে লঞ্চগুলো ঘাট ছাড়তে বাধ্য করে মাত্র। গতকাল বরিশাল লঞ্চঘাটে এ চিত্র দেখা যায়।
বিআইডাব্লিইটিএ জানায়, গতকাল বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশে ২০টি লঞ্চ ছেড়ে যায়। আজ শনিবারসহ আরো দুই-তিন দিন লঞ্চে ভিড় হবে। বাংলাদেশ যাত্রীবাহী লঞ্চ মালিক সমিতির বরিশাল শাখার সদস্য শহীদুল ইসলাম পিন্টু বলেন, ‘অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে না ওঠার জন্য আমরাও নিষেধ করছি। বিআইডাব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ মাইকে ঘোষণা দিচ্ছে। নৌ পুলিশ সদস্যরা ঘাটে উপস্থিত হয়ে যাত্রীদের বারণ করছেন। কিন্তু যাত্রীরা বাধা মানছে না। ’
বরিশাল নৌবন্দর কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ঈদের পর আজই (গতকাল) যাত্রীদের চাপ সবচেয়ে বেশি। অতিরিক্ত যাত্রী না ওঠাতে আমরা লঞ্চ কর্তৃপক্ষকে চাপ দিচ্ছি। কর্তৃপক্ষ তা মানছে না। যাত্রীরাও শুনছে না। ’
গরমে ভোগান্তি
শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথে ঢাকাসহ বিভিন্ন কর্মস্থলমুখী যাত্রী ও যানবাহনের বড় চাপ ছিল। বিআইডাব্লিউটিএ পাঁচটি ফেরি দিয়ে যাত্রী, জরুরি ও কাঁচামালবাহী গাড়ি এবং অন্য যানবাহন পারাপার করায় বাংলাবাজার ঘাট এলাকায় পারাপারের অপেক্ষায় বাইক ও দুই শতাধিক যানবাহনের সারি সৃষ্টি হয়। তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। তীব্র গরমে নারী, শিশুসহ যাত্রীরা ভোগান্তি পোহায়। এদিকে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে ছেড়ে আসা যানবাহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে যাত্রীরা অভিযোগ করে। লঞ্চে যাত্রী নিয়ন্ত্রণে একাধিক সংস্থাকে কাজ করতে দেখা গেছে। বরিশাল থেকে আসা বাইকার মো. কিবরিয়া বলেন, ‘বাইকের জন্য পৃথক ঘাট করায় আমাদের ভোগান্তি অনেক বেড়েছে। ’
দৌলতদিয়ায় বাসের দীর্ঘ সারি
গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া লঞ্চ ও ফেরিঘাটে যাত্রীর ঢল নামার পাশাপাশি ঢাকাগামী যাত্রীবাহী বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কারসহ বিভিন্ন গাড়ির চাপ বেড়ে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। উপচে পড়া যাত্রীর কারণে ফেরিগুলো ধারণক্ষমতার অর্ধেক গাড়ি নিয়ে দৌলতদিয়া থেকে পাটুরিয়া ঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। লঞ্চগুলো অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে ছেড়ে যায়।
বিআইডাব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) প্রফুল্ল চৌহান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পরিস্থিতি সামাল দিতে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ছোট-বড় ২১টি ফেরি সার্বক্ষণিক চলাচল করছে। ’ লঞ্চে ধারণক্ষমতার বেশি যাত্রী পরিবহনের বিষয়ে দৌলতদিয়া লঞ্চ টার্মিনালে কর্মরত বিআইডাব্লিউটিএর ট্রাফিক পরিদর্শক আফতাব হোসেন বলেন, যাত্রীর চাপ সামাল দিতে লঞ্চে কিছুটা বেশি যাত্রী বহন করা হচ্ছে।
ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ যাত্রী
বরগুনায় গতকাল ধারণক্ষমতার বেশি যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চগুলো হলো— বরগুনা থেকে এমভি রয়েল ক্রুজ-২, এমভি পুবালি-১; আমতলী লঞ্চঘাট থেকে এমভি শতাব্দী বাঁধন ও এমভি তরঙ্গ-৭ এবং আমুয়া লঞ্চঘাট থেকে রাজহংস। বরগুনা-ঢাকা পথে লঞ্চগুলোতে অতিরিক্ত ভাড়াও আদায় করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, লঞ্চগুলোতে কোনো অবস্থাতেই অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করা যাবে না। শনিবার (আজ) থেকে লঞ্চগুলোতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।
ভোলা জেলার আটটি পথে ৩৫টি লঞ্চ চলাচল করে। তবে লঞ্চের সংখ্যা কম থাকায় ভোগান্তি নিয়েই কর্মস্থলে ফিরছে মানুষ। ভোলার ইলিশা, দৌলতখান, চরফ্যাশন, বোরহানউদ্দিন ও লালমোহন উপজেলার মঙ্গলসিকদার প্রভৃতি ঘাট থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায় লঞ্চগুলো।