জুলাই ২৭, ২০২৪

আমাদের সম্পর্কে আরো জানুনঃ

পুরান ঢাকার কেমিক্যাল গুদাম নেয়া হচ্ছে টঙ্গীতে

নিজস্ব প্রতিবেদক:
পুরান ঢাকায় অবস্থিত কেমিক্যাল গুদামগুলো সরিয়ে টঙ্গীর কাঁঠালদিয়া মৌজায় নেয়া হবে বলে জানা গেছে। পুরান ঢাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এটি। নিমতলী বা চুড়িহাট্টার ঘটনার পর থেকেই কেমিক্যাল গুদামগুলো সেখান থেকে সরিয়ে নেয়ার দাবি ওঠে।

শনিবার (১৪ মার্চ) টঙ্গীর কাঁঠালদিয়ায় রাসায়নিক গুদাম নির্মাণ প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়। অপেক্ষাকৃত কম জনঘনত্বপূর্ণ এলাকায় এই কেমিক্যাল গুদাম নির্মাণ করা হচ্ছে।

প্রকল্প উদ্বোধন করেন, শিল্প মন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল হালিমের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, প্রকল্প পরিচালক মনিরুজ্জামান খান, বিএসইসি’র চেয়ারম্যান রইছ ‍উদ্দিন প্রমুখ।

শিল্পমন্ত্রী বলেন, রাজধানীর জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার সাময়িকভাবে রাসায়নিক দ্রব্য সংরক্ষণের জন্য প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। এর স্থায়ী সমাধানের জন্য মুন্সিগঞ্জে বিসিক কেমিক্যাল শিল্পনগরী গড়ে তোলা হচ্ছে।

তিনি বলেন, এ শিল্প নগরী স্থাপন হলে স্থায়ীভাবে কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের স্থায়ীভাবে মুন্সিগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হবে। তখন কাঁঠালদিয়ার এই অস্থায়ী গুদাম ও স্থাপনা বিএসইসি’র অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ঢাকা স্টিল ওয়ার্কস লিমিটেড ব্যবহার করবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে পুরান ঢাকার জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।

মন্ত্রী বলেন, সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে গাজীপুর জেলায় টঙ্গীর কাঁঠালদিয়া মৌজায় বিএসইসি’র নিজস্ব ৬ একর জায়গার ওপর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ৯১ কোটি ৭৪ লাখ ৪৬ হাজার। তারমধ্যে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে পরিকল্পনা কমিশন বিশেষ থোক বরাদ্দ থেকে প্রকল্পের অনুকূলে ১৭ কোটি ১৪ লাখ বরাদ্দ দিয়েছে। নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এই অস্থায়ী রাসায়নিক গুদাম চলতি বছর ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে।

প্রকল্প এলাকায় ৫৩টি অস্থায়ী গুদাম, ভূমি উন্নয়ন মাটি ভরাট, ১ লাখ গ্যালন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি ওভারহেড ও একটি আন্ডারগ্রাউন্ড পানির ট্যাংক নির্মাণ, বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন, ট্রান্সফরমার, জেনারেটর, ফায়ার হাইড্র্যান্টসহ স্বয়ংক্রিয় অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা স্থাপন করা হবে। সংযোগ রাস্তার আরসিসি ড্রেন ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক কাজ করা হবে। শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি এলাকায় রাসায়নিক কেমিক্যাল গুদাম আমাদের অনেক মানুষের জীবন বিপন্ন করেছে। তাই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ঢাকা থেকে কেমিক্যাল গুদাম অপেক্ষাকৃত কম ঘনবসতি এলাকায় সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্তের আলোকে এখানে অস্থায়ী ভিত্তিতে কেমিক্যাল গুদাম নির্মাণ করা হবে। যেহেতু মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান এলাকার কেমিক্যাল পল্লীর কাজ শেষ হতে অনেক সময় লাগবে। তাই আপাতত আর যাতে নিমতলীর মতো এরকম ঘটনা না ঘটে সেজন্য এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, এই প্রকল্পের কাজ চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ হবে। এরপর পুরান ঢাকার কেমিক্যাল গুদাম টঙ্গিতে চলে আসবে। এখানে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে কেমিক্যাল গুদাম নির্মাণ করা হবে। এই প্রকল্প এলাকায় কোনো রকম অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনার ঘটার সম্ভাবনা নেই। চারদিকে উঁচু দেয়াল দেওয়া হবে। যেন এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।

প্রতিমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকারি কাজের একটা বদনাম আছে কোনো প্রকল্প শুরু করলে ধীরগতিতে আগায়। তাই নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে বলবো কোনোভাবেই যেন ডিসেম্বর অতিক্রম না করে।

প্রকল্প এলাকার ক্ষতিগ্রস্তদের যৌক্তিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, অবশ্যই যতটুক সম্ভব ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। বস্তিবাসীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা যারা যে এলাকা থেকে আসছেন এলাকায় চলে যান, মুজিববর্ষে কেউ গৃহহীন থাকবে না। আপনাদের প্রত্যেকের বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন যারা ঢাকা ছেড়ে গ্রামমুখী হবে তাদের বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হবে।

নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী রাসেল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এই প্রকল্পটি এখানে হচ্ছে। আমি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে বলবো যেহেতু একটি রাসায়নিক গুদাম, তাই সবার আগে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এই প্রকল্প যেন কোনোভাবেই ঝুঁকির কারণ না হয়। এখানে যেন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে গুদাম নির্মাণ হয়।

নিজ নির্বাচনী এলাকায় নির্মাণ হতে যাওয়া প্রকল্প নিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে পুরান ঢাকার মানুষ যেমন দীর্ঘদিনের ঝুঁকি থেকে মুক্ত হবে তেমনি এই এলাকার মানুষের কথা চিন্তা করে এখানেও নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। #

Facebook
Twitter
LinkedIn
Pinterest
Reddit