প্রথমবারের মতো রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি

উন্নয়ন ডেস্ক –

প্রথমবারের মতো রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮২ হাজার কোটি টাকার বেশি ঘাটতি হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ইতিহাসে এটি বিষাদময় অধ্যায় হয়ে থাকবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

২০১৯-২০ অর্থবছরে তিন লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের মূল লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। পরে তা কমিয়ে তিন লাখ ৫০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়।

এর বিপরীতে সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছে দুই লাখ ১৮ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা। যা সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮২ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কম এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা কম। আলোচ্য সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছিল দুই লাখ ২৩ হাজার ৪৬১ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে ২ দশমিক ২৬ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

খাতওয়ারি হিসাবে, রাজস্ব আদায়ের সবচেয়ে বেশি ঘাটতি হয়েছে আয়কর খাতে। এক লাখ ছয় হাজার ৬৭৯ কোটি টাকার বিপরীতে আয়কর আদায় হয়েছে ৭৩ হাজার চার কোটি টাকা। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার ৬৮ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। অবশ্য প্রবৃদ্ধি হিসেবে একমাত্র আয়কর খাতেই ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তুলনায় এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে দশমিক ১৪ শতাংশ। এছাড়া মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) এবং শুল্ক খাতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আমদানি শুল্ক খাতে ২৪ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা ঘাটতি হয়েছে। ৮৫ হাজার ২২১ কোটি টাকার বিপরীতে শুল্ক আদায় হয়েছে ৬০ হাজার ৫৫২ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি হিসেবে দশমিক ৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ভ্যাট খাতে এক লাখ আট হাজার ৬০০ কোটি টাকার বিপরীতে ৮৪ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। এ খাতে ২ দশমিক ৬৭ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

রাজস্ব আদায়ের ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এর আগে সামান্য হলেও প্রতি অর্থবছরেই ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৯৭২-৭২ অর্থবছরে। এটি ছিল ৬৭ দশমিক ২২ শতাংশ। আর ১৯৭৫-৭৬ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৬৪ দশমিক ১৮ শতাংশ। আর সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৯৯৯-২০০০ সালে ১ দশমিক ৭১ শতাংশ। এবারই প্রথম নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হল।

অবশ্য রাজস্ব আদায়ের নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির বিষয়টি আঁচ করতে পেরে আগেই অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছিল এনবিআর। ১৪ মে অর্থসচিবকে পাঠানো এক চিঠিতে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘২০১৮-১৯ অর্থবছরে আহরিত মোট রাজস্ব দুই লাখ ৩৪ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকার বিপরীতে চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছরের শেষে মোট দুই লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা আহরিত হতে পারে। যা প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা কম। বর্তমান ২০১৯-২০ অর্থবছরে সংশোধিত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তিন লাখ কোটি টাকা। দুর্যোগ দীর্ঘায়িত হওয়ায় যা আহরণ এক প্রকার অসম্ভব বিবেচনা করা যায়।’

চিঠিতে নতুন ২০২০-২১ অর্থবছরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের শঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়, অর্থবছরের শুরু থেকে দুর্যোগ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও স্থানীয় ও বৈদেশিক অর্থনীতির ওপর বিপুল প্রতিক্রিয়ায় আশানুরূপ রাজস্ব আহরণ সম্ভব হবে না।

এরপরও বর্তমান বছরের সম্ভাব্য আদায়ের ওপর পূর্ববর্তী গড় প্রবৃদ্ধি ১৪ শতাংশ হিসাব করা হলে আগামী (২০২০-২১) অর্থবছরের মোট আহরণ দুই লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি হবে না বলে পরিসংখ্যানভিত্তিক ধারণা করা যায়। অপর দিকে আগামী (২০২০-২১) অর্থবছরের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, যা আদায় দুরূহ হবে।