জুলাই ২৭, ২০২৪

আমাদের সম্পর্কে আরো জানুনঃ

প্রদীপ, লিয়াকতসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

উন্নয়ন ডেস্ক –

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যার ঘটনায় টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ ও টেকনাফ বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের আইসি পুলিশ পরিদর্শক মো. লিয়াকতসহ ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।

সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌসের কক্সবাজারে দায়ের করা মামলায় ওই নয় আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

এ ঘটনায় নয় পুলিশ সদস্যসহ ১৭ জনকে প্রত্যাহার করেছে কর্তৃপক্ষ।

বুধবার কক্সবাজারে টেকনাফ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহর আদালতে ওসি প্রদীপ ও মো. লিয়াকতসহ নয়জনকে অভিযুক্ত করে হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহত সাবেক মেজর সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে টেকনাফ থানার ওসিকে মামলাটি এফআইআর হিসাবে রুজু এবং র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র‌্যাব-১৫) তদন্তের নির্দেশ দেন।

গত ৩১ জুলাই রাত সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে সিনহা নিহত হওয়ার সময় ওই আসামিরা উপস্থিত ছিলেন।

আদালতের বিচারক তামান্না ফারাহ মামলাটি আমলে নিয়ে সেটি টেকনাফ থানায় নিয়মিত মামলা হিসেবে রেকর্ড করতে নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে তিনি হত্যা মামলাটি তদন্তের জন্য কক্সবাজারের র‌্যাব-১৫-কে দায়িত্ব দিয়ে আগামী সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছেন। মামলাটি গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে থানায় দায়ের হয়েছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। তবে বিষয়টি নিশ্চিত হতে থানার ভারপ্রাপ্ত হিসেবে কর্মরত পরিদর্শক (তদন্ত) এ বি এস এম দোহার মোবাইল ফোনে কল দিলেও তিনি ধরেননি।

মামলার এজাহারে সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস অভিযোগ করেন, টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাসের নির্দেশে পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলী তাঁর ভাইকে গুলি করে হত্যা করেন। বাদী উল্লেখ করেন যে ঘটনার কিছুক্ষণ পর ওসি প্রদীপ কুমার দাস ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি এসেই তখনো জীবিত থাকা সিনহাকে উদ্দেশ করে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন এবং তাঁর শরীরে লাথি মারেন। মৃত্যু নিশ্চিত হলে একটি ‘ছারপোকা গাড়িতে’ তুলে সিনহাকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের উদ্দেশে পাঠানো হয়।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) টুটুল ও কনস্টেবল মোহাম্মদ মোস্তফা।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, একটি ইউটিউব চ্যানেলের জন্য ভিডিও চিত্র ধারণ শেষে ৩১ জুলাই রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা নিজস্ব প্রাইভেট কার নিয়ে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে কক্সবাজার আসছিলেন। বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর বাজারসংলগ্ন পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে পৌঁছলে ১ নম্বর আসামি লিয়াকত ও ৩ নম্বর আসামি এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত গাড়ি থামান। এ সময় সিনহা নিজের পরিচয় দেন। এর পরও সিনহার সঙ্গে থাকা ক্যামেরাম্যান সিফাতকে টেনেহিঁচড়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে ফেলা হয়। সিফাত দুই হাত উঁচু করা অবস্থায় গাড়িতে বসে থাকা সিনহার পরিচয় দেন। পরিচয় দেওয়ার পরও পুলিশ অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। একপর্যায়ে পরিদর্শক লিয়াকত হুংকার ছেড়ে ‘তোর মতো বহুত মেজরকে আমি দেখেছি, এইবার খেলা দেখামু’ বলে সিনহাকেও গাড়ি থেকে নামিয়ে ফেলেন। এরপর পরিদর্শক লিয়াকত ওসি প্রদীপের সঙ্গে মোবাইল ফোনে শেষ কথা বলেন—‘ঠিক আছে, শালাকেও শেষ করে দিচ্ছি।’ মুহূর্তে পরিদর্শক লিয়াকত কয়েক রাউন্ড গুলি করলে সিনহা মাটিতে পড়ে যান। এ সময় সিনহা জীবন রক্ষার্থে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ সদস্যরা তাঁকে চেপে ধরে আবার মাটিতে ফেলে দেন।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়, এমনকি মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য পরিদর্শক লিয়াকত আরো এক রাউন্ড গুলি করেন। এরপর তাঁর দেহ কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। সিনহার মৃত্যুর ঘটনাটি ভিন্ন খাতে নিতে ইয়াবা, গাঁজা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ এনে টেকনাফ থানায় দুটি মামলা দায়েরও করা হয়।

মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস আদালত থেকে বেরিয়ে বলেন, ‘ওসি প্রদীপ কুমার দাশের নির্দেশনা মতে পরিদর্শক লিয়াকত ঠাণ্ডা মাথায় গুলি করে আমার ভাইকে হত্যা করেছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘পরে আমার ভাইয়ের শরীরে ও মুখে বিভিন্ন জায়গায় লাথি মেরে তার মুখও বিকৃত করার চেষ্টা করে তারা। এ সময় অন্য আসামিরা তাদের সহযোগিতা করে।’ তাই তিনি আইনের আশ্রয় নিচ্ছেন।

মামলাটি দায়েরের ক্ষেত্রে আইনগত সহযোগিতায় ছিলেন কক্সবাজারের সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ মোস্তফাসহ আরো কয়েকজন।

এদিকে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি শাজাহান কবির গত রাতে কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে সিনহা মো. রাশেদ খানের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন এসআই মো. আমিনুল ইসলাম। তিনি সিনহার দেহে তিনটি গুলি ঢুকে তিনটি ছিদ্র করে বেরিয়ে যাওয়ার ক্ষত পেয়েছেন। ঢোকা ও বেরোনো মিলে মোট ছয়টি ছিদ্র মরদেহে ছিল।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Pinterest
Reddit