প্রধানমন্ত্রীর ৩ প্রস্তাব : মহামারীতে চাকরি হারানো লাখো শ্রমিকদের জন্য

উন্নয়ন ডেস্ক –

জুলাই ০৮, ২০২০

এই মহামারীতে আমাদের অভ্যন্তরীণ এবং বৈশ্বিক সরবরাহ চেইন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। আমরা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের রফতানি আদেশ হারিয়েছি, আমাদের অনেক শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, লাখ লাখ শ্রমিক তাদের চাকরি হারিয়েছে।

আজ বুধবার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ‘গ্লোবাল লিডার’স ডে’ উপলক্ষে এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে দেয়া ভিডিও বার্তায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনা মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের সংকটগুলো উত্তরণের জন্য তিনটি প্রস্তাবও দেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় এখনই সব দেশ, আন্তর্জাতিক সংস্থা, নাগরিক সমাজ সংস্থা এবং বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণে সারা বিশ্বে একটি জোরালো এবং সু-সমন্বিত সাড়া প্রয়োজন। যেখানে জি-৭, জি -২০, ওইসিডি এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাগুলোর সহায়তায় এই সংকট উত্তরণে সব ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বতন্ত্রভাবে সবার জন্য উপযুক্ত কাজের ব্যবস্থা করা অত্যন্ত কঠিন। কিন্তু আমরা সকলে একত্রে এটি করতে পারি।

মহামারীর থাবায় অর্থনীতির ক্ষতির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এই বৈশ্বিক দুর্যোগ বছরের পর বছর ধরে গড়ে ওঠা আমাদের বিশ্বায়ন এবং কানেকটিভিটিকে হুমকিতে ফেলেছে। তিনি বলেন, কভিড-১৯ মহামারী এখন কেবল স্বাস্থ্য সমস্যা নয় বরং এটি এখন পূর্ণাঙ্গ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকটে রূপ নিয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ক্ষুদ্র শিল্পগুলো তার বেশিরভাগ সম্পদ ও বাজার হারিয়েছে এবং সর্বোপরী সরবরাহ চেইন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ায় আমাদের কৃষির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

এই মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, কভিড-১৯ ভাইরাসটি সংক্রমণের ক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দিচ্ছে না। তবে এর বিরূপ প্রভাবগুলো দুর্বল, অভিবাসী এবং নারী শ্রমিকদের ওপর বেশি পড়ছে, তাদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণ করছে।

চলমান করোনা সংকটে শ্রমিক সমস্যাগুলো উত্তরণে তিনটি প্রস্তাব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রস্তাবগুলো হলো:

১. এই সংকটের সময় বিদেশের বাজারে অভিবাসী শ্রমিকদের চাকরি বহাল রাখতে হবে। ২. যদি অব্যহতি দিতেই হয় তবে শ্রমিকদের সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্য সুবিধাসহ ক্ষতিপূরণ এবং অন্যান্য বরখাস্ত সুবিধাগুলো নিশ্চিত করতে হবে।৩. মহামারীর পরে অর্থনীতিকে সক্রিয় করতে এই কর্মীদের পুনরায় নিয়োগ দিতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, কভিড-১৯ মহামারী বিভিন্ন দেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। বিশেষ করে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শ্রমিকরা। আমাদের বিপুল সংখ্যক অভিবাসী শ্রমিক চাকরি হারিয়েছে, যার ফলে রেমিট্যান্সে ঘাটতি। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে রেমিট্যান্স আমাদের মূল উপাদান।

তিনি বলেন, বর্তমানে বিপুল সংখ্যক বেকার অভিবাসী শ্রমিকদের প্রত্যাবর্তন একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। বিশ্বব্যাংক ভবিষ্যদ্বাণী করেছে, আমরা ২০ শতাংশের বেশি রেমিট্যান্স আয় হারাবো।

শতবর্ষ উপলক্ষ্যে আইএলও –এর ঘোষণার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সেখানে আমরা সকলে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, জনসংখ্যার পরিবর্তন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং বিশ্বায়নের মাধ্যমে বিশ্বকে বদলে দেয়ার কথা বলেছিলাম।

করোনা পরিস্থিতির মধ্যে বাংলাদেশের আশ্রয়ে থাকা মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

করোনা মহামারী সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারের নেয়া কিছু পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কভিড-১৯ মহামারী সংকট শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে প্রণোদনা হিসেবে অর্থনৈতিক ও সমাজের বিভিন্ন সেক্টরের মানুষকে সহযোগিতা করতে ১২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করি। এই সহায়তা প্যাকেজ আমাদের জিডিপির ৩ দশমিক ৭ শতাংশের সমান।

তিনি বলেন, রফতানি শিল্পের শ্রমিকদের মজুরি দিতে এক বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেয়া হয়েছে। কভিড-১৯ মহামারীতে বেকার হওয়া ৫০ মিলিয়নের বেশি মানুষকে সরাসরি নগদ এবং অন্যান্য সুবিধা দেয়া হয়েছে।