বঙ্গবন্ধুর খুনি মোসলেহউদ্দিন আদৌ আটক কি

উন্নয়ন ডেস্ক –

বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি আব্দুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকরের পর আরেক খুনি রিসালদার মোসলেহউদ্দিনকে আটকের খবর জানিয়েছিল ভারতীয় গণমাধ্যম। কিন্তু খুনি মোসলেহউদ্দিন আটক কি না, তা গত চার মাসেও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বুধবার ইত্তেফাককে বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনি রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন ভারতে গ্রেফতারের ব্যাপারে আমাদের কাছে পজিটিভ কোনো নিউজ নেই। গ্রেফতার হলে এতোদিনে তো তাকে দেশে ফেরত আনা যেত।

এ দিকে ইন্টারপোলের বাংলাদেশ শাখা অফিসের প্রধান (এনসিবি) ও পুলিশের সহকারী উপ-মহাপরিদর্শক (এআইজি) মহিউল ইসলাম বলেন, গণমাধ্যমেই আমরা বঙ্গবন্ধুর খুনি মোসলেহউদ্দিনের গ্রেফতারের বিষয়টি জেনেছিলাম। এরপর আমরা নিশ্চিত হওয়ার জন্য ভারতীয় এনসিবির কাছে চিঠি দিয়েছিলাম। কিন্তু গত চার মাসেও আমরা ঐ চিঠির কোনো জবাব পাইনি। গত ১২ এপ্রিল সাবেক পলাতক ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

এরআগে ৭ এপ্রিল পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) তাকে রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করে। ঐ সময় আদালতের কাঠগড়ায় ওঠানোর পর পাবলিক প্রসিকিউটরের প্রশ্নের জবাবে মাজেদ জানিয়েছিল সে ২৩/২৪ বছর ভারতের কলকাতায় আত্মগোপনে ছিল।

আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর হবার পরপরই ভারতীয় গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছিল বঙ্গবন্ধুর আরেক খুনি রিসেলদার (বরখাস্ত) মোসলেহউদ্দিনও ভারতে গোয়েন্দাদের সহযোগিতায় আটক হয়েছে। ভারতীয় গণমাধ্যমে আরো বলা হয়েছিল, ফাঁসি কার্যকর হওয়া বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদ দীর্ঘদিন কলকাতায় ছিল। ফাঁসি কার্যকরের আগে তার কাছ থেকে বাংলাদেশের গোয়েন্দারা মোসলেহউদ্দিনের অবস্থান জেনে নেয়।

ঐ সময় ভারতীয় গণ্যমাধ্যমে বলা হয়েছিল, উত্তর ২৪ পরগনার একটি আধাশহরে ইউনানি চিকিত্সক সেজে ভাড়া ছিল মোসলেহউদ্দিন। লকডাউনের সময় ভারত থেকে মোসলেহউদ্দিনকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ায় সমস্যা হতে পারে বলে ঢাকা বিষয়টি ভারতের গোয়েন্দাদের জানায়। ভারতীয় গোয়েন্দারা এই খুনিকে কার্যত তাড়িয়ে সীমান্তের কোনো একটি অরক্ষিত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের হাতে তুলে দিয়েছেন। তবে এ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।

বঙ্গবন্ধুকে নিজ হাতে গুলি করেছিল মোসলেহউদ্দিন

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। যে কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা এই হত্যার মিশনে অংশ নেয় তার মধ্যে অগ্রভাবে ছিল রিসালদার মোসলেহউদ্দিন। গুলির শব্দ শুনে বঙ্গবন্ধু যখন বিষয়টি জানার জন্য নিচে নামছিলেন সেই সময় সিঁড়িতে বঙ্গবন্ধুকে নিজহাতে গুলি করে হত্যা করে এই রিসালদার মোসলেহউদ্দিন। তাছাড়া জেলহত্যায়ও জড়িত ছিল এই খুনি। নারকীয় দুই হত্যার পর জিয়াউর রহমানের আশীর্বাদে তেহরান ও জেদ্দা দূতাবাসে কাজ পায়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর অন্য খুনিদের সঙ্গে সেও দেশ ছেড়ে থাইল্যান্ড হয়ে পাকিস্তানে পালিয়ে যায়। এরপর জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেয়। ভারতীয় গণমাধ্যমের তথ্যমতে, তার কয়েকবছর পর চলে আসে ভারতে এবং উত্তর চব্বিশ পরগনার ঠাকুরনগর এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। পাঁচ ছেলে ও এক মেয়ের জনক এই আত্মস্বীকৃত খুনি। গ্রামের বাড়ি নরসিংদী জেলার শিবপুরের দত্তেরগাঁঁও।

বাকি খুনিরা কে কোথায়?

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১২ আসামির মধ্যে কারাবন্দি ৫ আসামির ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি দিবাগত রাতে ফাঁসি কার্যকর হয়। তারা হলো—সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মুহিউদ্দিন আহমেদ, বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য ৬ আসামি পলাতক ছিল। তাদের মধ্যে চলতি বছরের ১২ এপ্রিল আবদুল মাজেদের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়।

পলাতক বাকি ৫ জনের মধ্যে লে. কর্নেল (অব.) খন্দকার আব্দুর রশিদ (বরখাস্ত) লিবিয়া ও বেলজিয়ামে অবস্থান করছে। বেশিরভাগ সময় লিবিয়াতে থেকেই ব্যবসা-বাণিজ্য করছে। লে. কর্নেল (অব.) শরীফুল হক ডালিম (বরখাস্ত) পাকিস্তানে অবস্থান করছে বলে জানা গেছে। লে. কর্নেল (অব.) এ এম রাশেদ চৌধুরী (বরখাস্ত) যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে, লে. কর্নেল (অব.) এন এইচ এমবি নূর চৌধুরী (বরখাস্ত) কানাডায় রয়েছে।