উন্নয়ন ডেস্ক –
১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের সময় বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্ম নিরপেক্ষতাকে নির্ধারণ করেন। সংবিধানে সমাজতন্ত্র ও শোষণমুক্তি সম্পর্কে লেখা হয়: ‘মানুষের উপর মানুষের শোষণ হইতে মুক্ত ন্যায়ানুগ ও সাম্যবাদী সমাজ লাভ নিশ্চিত করিবার উদ্দেশ্যে সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হইবে।’
৪ঠা নভেম্বর খসড়া সংবিধান অনুমোদন উপলক্ষ্যে সংসদে প্রদত্ত ভাষণে রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি ব্যাখ্যা করে সমাজতন্ত্র সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু বলেন:
‘আমরা সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করি; এবং বিশ্বাস করি বলেই আমরা ঐগুলি জাতীয়করণ করেছি। যারা বলে থাকেন, সমাজতন্ত্র হলো না, সমাজতন্ত্র হলো না, তাদের আগে বোঝা উচিত, সমাজতন্ত্র কী? সমাজতন্ত্রের জন্মভূমি সোভিয়েত রাশিয়ার ৫০ বছর পার হয়ে গেল, অথচ এখনো তারাও সমাজতন্ত্রের পথে এগিয়ে চলেছে। সমাজতন্ত্র গাছের ফল নয় অমনি চেখে খাওয়া যায় না। সমাজতন্ত্র বুঝতে অনেক দিনের প্রয়োজন, অনেক পথ অতিক্রম করতে হয়। সেই পথ বন্ধুর। সেই বন্ধুর পথ অতিক্রম করে সমাজতন্ত্রে পৌঁছা যায় এবং সেজন্য পহেলা স্টেপ যাকে প্রথম পদক্ষেপ বলা হয়, সেটা আমরা গ্রহণ করেছি; শোষণহীন সমাজ। আমাদের সমাজতন্ত্র মানে শোষণহীন সমাজ। সমাজতন্ত্র আমরা দুনিয়া থেকে হাওলাত করে আনতে চাই না। একেক দেশ একেক পন্থায় সমাজতন্ত্রের দিকে এগিয়ে চলেছে। সমাজতন্ত্রের মূল কথা হলো শোষকহীন সমাজ। সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে সেই দেশের কী আবহাওয়া, কী ধরনের অবস্থা, কী ধরনের মনোভাব, কী ধরনের আর্থিক অবস্থা, সবকিছু বিবেচনা করে ক্রমশ এগিয়ে যেতে হয় সমাজতন্ত্রের দিকে এবং তা আজকে স্বীকৃত হয়েছে।’
বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন বিদেশ থেকে হাওলাত করে কোনো দিন সমাজতন্ত্র হয় না। সমাজতন্ত্রের জন্য চীন বা রাশিয়ার পদ্ধতি অনুসরণ করলে চলবে না। সমাজতন্ত্রের মূল কথা হচ্ছে শোষণহীন সমাজ এবং সম্পদের সুষম বণ্টন। দেশের সকল মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও স্বাস্থ্যের নিরাপত্তা দিতে পারে সমাজতন্ত্র। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন বাংলাদেশ হবে একটি জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র।
আজ আমাদের দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার দিকে তাকালে বারবার বঙ্গবন্ধুর কথা মনে হয়। তিনি চেয়েছিলেন দেশের সকল নাগরিক ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে প্রয়োজনে চিকিত্সার সমান সুযোগ পাবে। কিন্তু আমাদের দেশের সবচেয়ে অনুন্নত সম্ভবত স্বাস্থ্য খাত। বছরের পর বছর কোটি কোটি টাকা খরচ করেও সরকার স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন করতে পারছে না। এর মূল কারণ হচ্ছে দুর্নীতি। যে সীমাহীন দুর্নীতি যুগ যুগ ধরে এ খাতে বিরাজ করছে, তা একটু একটু করে এখন প্রকাশিত হচ্ছে। সাহেদের মতো অনেক সাহেদই সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজস করে মানুষের দুর্দশাকে পুঁজি করে তাদের আখের গুছিয়ে নিচ্ছে।
করোনা অতিমারি আমাদের দেখিয়ে দিচ্ছে বিপদের সময় আমরা কত অসহায়। রাজধানীতে বিত্তবান বা মধ্যবিত্তদের চিকিত্সার সুযোগ থাকলেও জেলা-উপজেলায় সাধারণ মানুষের জন্য তা হয় অপ্রতুল অথবা পুরোপুরি অনুপস্থিত। তাই সরকারের আশু কর্তব্য হবে স্বাস্থ্য খাতকে ঢেলে সাজানো, সব মানুষের চিকিত্সা সেবা নিশ্চিত করা। সঙ্গে সঙ্গে জোর দিতে হবে কৃষি খাতে—যা আমাদের অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন তখনই অর্থবহ হবে, যখন তার ভাবনাগুলোকে আমরা বাস্তবে রূপান্তরিত করতে পারব। জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপনের অনেক আড়ম্বর সংক্ষিপ্ত করে যদি একট জন্মশতবার্ষিকী হাসপাতাল করা হতো, তবে আমার ক্ষুদ্র বিবেচনায়, যুগ যুগ ধরে মানুষ তার সুফল ভোগ করত এবং স্মরণ করত কোন উপলক্ষ্যে এ হাসপাতাল তৈরি হয়েছিল।
জন্মশতবর্ষ পালনের আনন্দের মধ্যে বর্ষ পরিক্রমায় এসেছে শোকাবহ আগস্ট। আজ আমরা শোক করব না, শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে বঙ্গবন্ধুর জীবনকে উদ্যাপন করব। তার চেতনা ধারণ করে বর্তমান সংকট আমরা মোকাবিলা করব।
জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু।