বন্ধুত্বের মধ্যে সীমান্তে হত্যাকাণ্ড কি ঠিক?

শ্রিংলাকে আবদুল মোমেন

নিজস্ব প্রতিবেদক:
বর্তমানে বাংলাদেশ সফররত ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার সঙ্গে এক সৌজন্য সাক্ষাতকালে- সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশিদের নিহত হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তা বন্ধে উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

আগামী ১৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আগমন ও এর পূর্ব প্রস্তুতি সংক্রান্ত বিষয়াদি পর্যবেক্ষণ করতে সোমবার (২ মার্চ) ঢাকা পৌঁছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা।

বৈঠক শেষে মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, “আমি বললাম, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমাদের জিরো কিলিং হবে বর্ডারে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ বছরে কিলিংটা অনেক বেড়ে গেছে, এটা আমাদের জন্য দুঃখজনক। আপনারা আমাদের বন্ধু মানুষ। বন্ধুদের মধ্যে কিলিং হওয়া ঠিক না।”

এ প্রেক্ষিতে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সীমান্ত হত্যা বন্ধে ‘চেষ্টা চালাবেন’ বলে আশ্বাস দিয়েছেন বলেও জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “উনি বললেন যে উনারা ট্রাই করবেন, এটা যাতে না হয়।”
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত নিরাপত্তার আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসাবে বরাবরই আসে সীমান্ত হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গটি। ২০১১ সালে বাংলাদেশি কিশোরী ফেলানী হত্যা সারা বিশ্বজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে এই পরিস্থিতি উন্নত হবে প্রত্যাশা করলেও সাম্প্রতিক অবস্থা বিবেচনায় তা নেতিবাচক বলেও ধারনা করা হচ্ছে।
ফেলানী ইস্যুর পর দুই দেশের আলোচনায় সীমান্তে হত্যার পরিমাণ শূন্যে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি আসে প্রতিবেশী ভারতের কাছ থেকে। মাঝে কিছুটা কমলেও সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের গুলিতে বাংলাদেশির মৃত্যু এখন আবারও বেড়েছে।
মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাবে দেখা গেছে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে ৩৭ জন এবং তাদের শারীরিক নির্যাতনের কারণে ছয়জনসহ মোট ৪৩ জন বাংলাদেশি নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন।
ফেব্রুয়ারির শুরুতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) জানায়, আগের দেড় মাসে সীমান্তে ১১ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন।
এর আগে সকালে সোনারগাঁও হোটেলে ’বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া: এ প্রমিজিং ফিউচার’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পর বিকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন তিনি।
এছাড়া সাক্ষাতে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি নিয়েও আলোচনা হওয়ার কথা জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমি বললাম যে, আমাদের তিস্তা… আপনারা বললেন যে, সবকিছু রেডি আছে, কিন্তু এখনও এটা শেষ হলো না। উনি বললেন যে, মোটামুটি এটাতে অসুবিধা আছে উনাদের, কিন্তু আশা করতেছি, এটা আগামীতে হবে।
“আমি বললাম যে, আমাদের জবাবদিহি আছে, আমরা একটি নির্বাচিত সরকার। গণতান্ত্রিক সরকার, মানুষ আমাদের এগুলো নিয়ে প্রশ্ন তোলে, ’তোমাদের বন্ধুত্বে কিন্তু কাজ হচ্ছে না তো।”
নয় বছর আগে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় বহু প্রতীক্ষিত তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতায় তা আটকে যায়।
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে শুষ্ক মৌসুমে সেচের জন্য তিস্তার পানি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে দ্বিপক্ষীয় সব ফোরামেই ঢাকার পক্ষ থেকে নয়া দিল্লিকে ওই চুক্তির বিষয়ে তাগিদ দেওয়া হয়।
২০১৪ সালে ভারতে ক্ষমতায় আসা বিজেপির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তিস্তা চুক্তির আশা দিলেও এখনও মমতাকে তিনি রাজি করাতে পারেননি।
জবাবে শ্রিংলা বলেন, ”আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থার মধ্যে কোনো চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে সবপক্ষের মতামত দরকার হয়। আপনাদের নিশ্চয়তা দিচ্ছি, যত দ্রুত সম্ভব এই বিষয়টির সমাপ্তি টানতে কাজ করছি আমরা।”
এছাড়া তিস্তার বাইরে অন্য ছয়টি নদীর পানি বণ্টন নিয়ে মোদীর সফরে চুক্তি সই হওয়ার সম্ভাবনার কথা শ্রিংলা বলেছেন বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
“আপনারা গতবারে আমাদের ফেনী নদীর কিছু সাহায্য করেছেন এবং এখন ভারতের প্রয়োজন আপনাদেরকে সাহায্য করা। বললাম, দিস ইজ গুড। উনি বললেন, ‘এবার আমরা আপনাদের প্রতিদান দিতে চাই’।”
ভারতে নাগরিকত্ব বিল নিয়ে চলমান সহিংসতার বিষয়টি আলোচনায় তোলার কথা জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, “আপনাদের দেশের অনেক ইস্যু আছে, যেগুলো আমাদের দেশে সময়ে সময়ে চিন্তার কারণ হয়। উদ্বেগ আমাদের জনগণও করে এবং সে জনগণের কাছে আমাদের জবাবদিহি করতে হয়। সেসব সম্পর্কে আমরা চাই তোমরা এমন কোনো কাজ করবে না, যাতে আমাদের অসুবিধার সৃষ্টি হয়।”