উন্নয়ন ডেস্ক –
মা সন্তানকে গর্ভে ধরে তিল তিল করে গড়ে তোলেন। সন্তানের সঙ্গে আক্ষরিক অর্থেই তাঁর নাড়ির সম্পর্ক। আর ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর মা-বাবা মিলেই পরম স্নেহে চলে সন্তান লালনের পালা। আদিকাল থেকেই চলছে এ চক্র।
আধুনিক কালে, বিংশ শতাব্দীতে এসে শুরু হয়েছে মা-বাবার প্রতি অবদানের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার পালা। গর্ভধারিণী বলেই হয়তো বিশ্বজুড়ে সব সংস্কৃতিতে মায়ের বন্দনা তুলনামূলকভাবে বেশি। কিন্তু মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে সবল হাতে সন্তানের ওপর ভরসার ছাতা মেলে রাখা বাবারাও একসময় স্বীকৃতি পেতে শুরু করেন। বিভিন্ন দেশে মা দিবস উদযাপনের কিছু পরই পালিত হতে থাকে বাবা দিবস।
বাবা দিবস পিতৃত্বের বন্ধনের পাশাপাশি সমাজে বাবাদের অবদানকে সম্মান জানানোর এক বিশেষ দিন। ইউরোপের ক্যাথলিক দেশগুলোতে সুদূর অতীতে মধ্যযুগ থেকে এটি ১৯ মার্চ সেন্ট জোসেফ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছিল। তবে আধুনিক কালে যুক্তরাষ্ট্রে বাবা দিবস চালু করেন সোনোরা স্মার্ট ডড। ১৯১০ সালে প্রথমবারের মতো জুনের তৃতীয় রবিবার বাবা দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়। দিবসটি সারা বিশ্বে অনুষ্ঠিত হয় বিভিন্ন তারিখে। বিভিন্ন অঞ্চলে আছে বাবাকে সম্মান জানানোর নিজস্ব ঐতিহ্য। কোনো কোনো দেশে এটি ছুটির দিন।
বাংলাদেশে মা, শিক্ষক বা ভালোবাসা দিবস ইত্যাদি হরেক দিবসের মতোই বাবা দিবসও বেশ সাম্প্রতিক ঘটনা। বিশ্বায়নের হাত ধরে একেকটি দিবস ‘বিশ্বগ্রামের’ অন্যতম জনপদ এ দেশেও ছড়িয়ে পড়ছে ধীরে ধীরে। এর পক্ষে-বিপক্ষে নানা মুনির নানা মত। অনেকেই যেমন বলেন, বাবা-মায়ের প্রতি ভক্তি-ভালোবাসা চিরন্তন। তার আবার দিনক্ষণ হয় নাকি! আবার দিবসের পক্ষের লোকের যুক্তি, ভালোবাসা সারা বছরই, তবে একটি দিন আলাদা করে বাবা-মাকে নিয়ে মাতায় দোষ কি!
অনেকেই আজ বাবাকে শুভেচ্ছা আর ভালোবাসা জানাবে, যার যার মতো করে। অনেক দেশে কার্ডও উপহার দেওয়া হয় বাবাকে। যাদের বাবা বেঁচে নেই, তারাও বাবার কথা স্মরণ করবে এদিন। সন্তানের মুখে হাসি ফোটানো সব বাবারই পরম চাওয়া। সামর্থ্যে তফাত থাকলেও সেই প্রত্যাশায় আমির-ফকিরে ভেদ নেই কোনো। রাজধানীতে রিকশা টেনে পেট চালানো গাইবান্ধার রিকশাচালক মনিরুল যেন অগুনতি বাবারই প্রতিনিধি। তাঁর স্বপ্ন ছেলে-মেয়েদের মুখে দুটো ভালো খাবার তুলে দেওয়া। গতকাল শনিবার বিকেলে শাহজাদপুরে একটি চায়ের দোকানের সামনে তাঁর সঙ্গে কথা হচ্ছিল। রিকশা চালিয়ে মনিরুল যা আয় করেন তার বড় একটি অংশই চলে যায় স্ত্রীর চিকিৎসা খরচে। দুই ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার খরচ জোগানোর পর যা থাকে তা ঘর ভাড়াতেই চলে যায়। কোনো মতে দু মুঠো ভাতের ব্যবস্থা করতে তাঁকে শরীরকে টেনে নিয়ে চলতে হয় রাজপথে। ছেলেমেয়ে দুটির পাতে কবে মাছ-গোশত তুলে দিয়েছিলেন তা ভুলে গেছেন। কবে আরেকবার ওদের ভালো কিছু খাওয়াবেন সেই তাড়নায় প্যাডেল মেরে চলেন পিচঢালা পথে। বাবারা তো এমনটাই হয়।