উন্নয় বার্তা ডেস্ক:নভেল করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রার্থীদের একটি বহর মানব ট্রায়াল চালাচ্ছে কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালগুলো দ্রুত চালানো হচ্ছে এবং রোগীর সুরক্ষার সঙ্গে আপস করা হচ্ছে। তবে এটাই কেবল মূল উদ্বেগ না। সুরক্ষা ও কার্যকারিতার মতো বিষয়গুলোকে ভ্যাকসিনগুলো বিশ্বের কাছে দ্রুত পৌঁছে দেয়ার বাধা হিসেবে মনে করা হচ্ছে। সরবরাহের গতি কমিয়ে দেবে এমন বেশির ভাগ বিষয়ই খুব কম মনোযোগ পাচ্ছে। সুরক্ষার সঙ্গে আপস না করে বিষয়গুলো দ্রুত করতে আমাদের অবশ্যই পরিকল্পনা করা উচিত।
কভিড-১৯ ভবিষ্যতের মহামারীগুলোর জন্য আমাদের দ্রুত ও নিরাপদে ভ্যাকসিন সরবরাহে একটি স্থায়ী ব্যবস্থা তৈরির সুযোগ করে দিয়েছে। এ প্রক্রিয়াটি অবশ্যই বার্ষিক ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন তৈরির মতো রুটিন ও নির্ভরযোগ্য করে তুলতে হবে।
মহামারী ভ্যাকসিনের আদর্শ বৈশিষ্ট্য হলো সবার জন্য গ্রহণযোগ্যভাবে নিরাপদ, কার্যকর ও টেকসই প্রতিরক্ষামূলক প্রতিরোধ প্রতিক্রিয়া তৈরি করবে, দ্রুত স্কেলযোগ্য, ঘরের তাপমাত্রায় স্থিতিশীল, একক ডোজ ও কম ব্যয়বহুল হবে।যদিও বর্তমান ভ্যাকসিন প্রার্থীদের কোনোটিরই এসব বৈশিষ্ট্য নেই। সামনের সারির এমআরএনএ ভ্যাকসিনগুলোর কোল্ডস্টোরেজ, কমপক্ষে দুটি ডোজ, ব্যয়বহুল ও জটিল বিতরণ ব্যবস্থার মতো বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। এজন্য আমাদের বিনিয়োগ এবং ভ্যাকসিনগুলোর উৎপাদন, পরিবহন ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে আরো সহজ করে তোলার বিষয়ে দৃষ্টি নিবন্ধ করা দরকার।
এছাড়া বার্ষিক ফ্লু ভ্যাকসিনগুলো নিয়ন্ত্রক সংস্থার দ্রুত অনুমোদনের জন্য একটি ভালো মডেল সরবরাহ করে এবং এটা সুরক্ষার সঙ্গে আপস করে না। ডোজটি প্রতি বছর সেই বছরের ফ্লু ভাইরাসের জন্য নতুনভাবে তৈরি করা হয় এবং অনুমোদনটি অত্যন্ত গতানুগতিক পথ অনুসরণ করে। একবার একটি ভ্যাকসিন ফরম্যাট অনুমোদিত হয়ে গেলে নিয়ন্ত্রকদের উচিত একটি নির্দিষ্ট ভ্যাকসিনের কী কী নতুন ঝুঁকি রয়েছে তা বিবেচনা করা। এবং ঝুঁকিগুলো হ্রাস ও ভবিষ্যতে অনুমোদনের গতি বাড়াতে দ্রুতগামী ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ডিজাইন করা যেতে পারে।
এ বিষয়ে ব্রিটেনের ভ্যাকসিন টাস্কফোর্সের চেয়ার কেট বিঙ্গহাম বলেন, পুরোপুরি অনুমোদনের আগে মহামারীর ভ্যাকসিনগুলোর দ্রুত বিতরণ সক্ষম করে তুলতে শর্তসাপেক্ষে অনুমোদনের বিধান তৈরি করা যেতে পারে।মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের মানদণ্ড নির্দিষ্ট করে দিয়েছে, যা ভালো পদক্ষেপ। ভ্যাকসিনগুলো রিয়েল-টাইম, কার্যকর তদারকি ও কার্যকারিতার জন্য বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্ক অবকাঠামো প্রয়োজন; কারণ জনসাধারণের আস্থা ও সুরক্ষা বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
বিঙ্গহাম বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভ্যাকসিনের ট্রায়ালগুলো উন্নত করার জন্য ক্যান্সারের ওষুধ তৈরির কৌশল অবলম্বন করা উচিত। উৎপাদন ও বৈশ্বিক ক্ষমতা অবশ্যই বৃদ্ধি করতে হবে বিশ্বজুড়ে নমনীয় ও স্কেলযোগ্য ভ্যাকসিন তৈরির ব্যবস্থা করতে হবে। স্বল্প ব্যয়বহুল, অতি স্কেলযোগ্য, ব্যয়বহুল কাচের বোতলের পরিবর্তে উচ্চ-থ্রটপুট প্লাস্টিকের বোতল তৈরিতে বিনিয়োগ করা অনেক জীবন বাঁচাতে পারে।
তিনি আরো বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেই আমাদের এসব কাঠামো গড়ে তুলতে হবে।বাদুড় থেকে অন্তত নয়টি করোনাভাইরাস এখনো মানুষে স্থানান্তরিত হয়নি। এগুলো ও অন্যান্য জুনোটিক রোগগুলো এবং বর্তমান ভাইরাস স্ট্রেইন পরিবর্তন করে ভবিষ্যৎ মহামারী সৃষ্টি করতে পারে। আমাদের চ্যালেঞ্জটি হলো অজানা সংক্রমণের পর যত দ্রুত সম্ভব ভ্যাকসিন তৈরি ও প্রয়োগের দিকে যাওয়া, আদর্শগতভাবে সেটা ছয় মাসেরও কম সময়ে।