উন্নয়ন ডেস্ক –
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) দেশের মানুষের মাথাপিছু গড় আয়ের যে হিসাব প্রকাশ করেছে, তা বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ অনেকে। তাদের মতে, করোনাকালে অনেকেরই আয় কমেছে। অনেকে কাজ হারিয়েছেন। অতিক্ষুদ্র এবং ক্ষুদ্র ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন অনেক উদ্যোক্তা। অর্থাৎ দৃশ্যত আয় কমেছে মানুষের। এ বাস্তবতায় মাথাপিছু আয় এত বেশি হওয়ার কথা না।
গত মঙ্গলবার চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ও মাথাপিছু গড় আয়ের সাময়িক হিসাব প্রকাশ করেছে বিবিএস। এতে দেখা যায়, এক বছরে মাথাপিছু গড় আয় বেড়েছে ২১ হাজার ৭৩২ টাকা। চলতি অর্থবছর মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৪১ হাজার ৪৭০ টাকা বা দুই হাজার ৮২৪ ডলারে।
জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান মিডিয়াকে বলেন, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির মধ্যে মাথাপিছু এত বেশি আয়ের হিসাব কীভাবে মিলল তার কোনো উত্তর নেই। তার অনুমান, ভিত্তিবছর পরিবর্তন এবং ডলারের বিপরীতে টাকার মান কিছুটা দুর্বল হওয়ার কারণে টাকার হিসাবে মাথাপিছু আয় বেড়ে থাকতে পারে। কিন্তু ভোক্তা ব্যয়, অভ্যন্তরীণ বাজার ও বিনিয়োগ- অর্থনীতির এই বিষয়গুলো করোনা থেকে কেবল বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। এর মধ্যেই এত বেশি আয় আসা কঠিন। তিনি মনে করেন, অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাবে হয়তো মাথাপিছু আয়ের হিসাবে পর্যালোচনার প্রয়োজন হতে পারে।
এক্ষেত্রে আয় বণ্টনের বিষয়টিও খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, দরিদ্র মানুষের ভোগক্ষমতা কমছে। ব্যয় এবং ভোগে বৈষম্য কমাতে বাজেটে পদক্ষেপ নিতে হবে। টিসিবির মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিক্রি এবং নগদ সহায়তা বাড়াতে হবে। শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যে বরাদ্দ বাড়লে সাধারণ মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেতে পারেন।
মাথাপিছু আয়ের হিসাবে অসঙ্গতি রয়েছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক এবং গবেষণা সংস্থা সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান। তার মতে, অর্থনীতির অন্যান্য সূচকের সঙ্গে এত বেশি আয়ের এ হিসাব কিছুতেই মেলানো যাচ্ছে না। করোনা, জ্বালানি মূল্য কিংবা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ- এসবের কি কোনো প্রভাব নেই? করোনায় যেখানে সবকিছু স্থবির ছিল, সেখান থেকে এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে আসেনি পরিস্থিতি। এ বিষয়গুলো তো একরকম দৃশ্যমান। তাহলে কীভাবে বিবিএস মাথাপিছু আয়ের এই হিসাবটি পেল?