উন্নয়ন ডেস্ক –
হাওরের নদ-নদীর পানি আগে দুই-তিন দিনে নেমে যেত। এবার ২৬ দিনেও তা সরছে না। এর কারণ হিসেবে নদীর তলদেশ ভরাট, বিলাসী সড়ক, সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ, ফসল রক্ষা বাঁধকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ ছাড়া পাহাড়ি প্রায় ২১টি নদী ও চেরাপুঞ্জির বিপুল পরিমাণ পানি বঙ্গোপসাগরে যাওয়ার প্রধান পথে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে তিনটি রেল ও সড়কসেতু পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত করছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের টেকনিক্যাল কমিটি এ নিয়ে কাজ করছে। সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘অল-ওয়েদার সড়কই হাওরের পানি বিলম্বে নামার কারণ। কয়েক বছর ধরে পানি দেরিতে নামলেও এবারের মতো এত ধীরগতিতে পানি নামতে দেখা যায়নি। কয়েক বছর আগে ঢলের পানি আসার দুই-তিন দিনের মধ্যে নেমে যেত। ’
বেসরকারি সংগঠন হাওরের পাশে বাংলাদেশের সদস্যসচিব হাসনাত কাইয়ূম এ সম্পর্কে বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের নদী, পলি বা পানি ব্যবস্থানার জন্য যে ধরনের পরিকল্পনা নেওয়া দরকার, আমরা তা না করে শুধু প্রশাসনিক জ্ঞান দিয়ে হাওরের পরিবেশবিরোধী নানা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে চলেছি। ’
হাওরে দৃষ্টিনন্দন সড়কের নামে উঁচু রাস্তা নির্মাণ এবং বর্তমান বাস্তবতায় কী ধরনের মাটির বাঁধ ফসল রক্ষায় কার্যকর হতে পারে—এসব ব্যাপারে কোনো সমীক্ষা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘হাওরের পানি সমুদ্রে যাওয়ার চ্যানেলগুলোও যে সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে, এদিকটায় কারো খেয়াল নেই। ফলে ভবিষ্যতে হাওরে স্থায়ী জলাবদ্ধতা তৈরিও অস্বাভাবিক নয়। ’
হাওরের কৃষি ও কৃষক রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্যসচিব চিত্তরঞ্জন তালুকদার বলেন, ‘এবার প্রায় ২৫ দিন ধরে থমকে আছে হাওরের নদীর পানি। এর অন্যতম কয়েকটি কারণ হলো নদী ভরাট হয়ে গেছে। তা ছাড়া অপরিকল্পিত বেড়িবাঁধও এর জন্য অনেকটা দায়ী। ’ তাঁর মতে, শুধু বাঁধ দিয়ে কখনো ফসলরক্ষা হবে না। এ অঞ্চলের বন্যার বৈশিষ্ট্য বুঝে প্রকল্প নিতে হবে।
গবেষক ও সংস্কৃতিকর্মী সজল কান্তি সরকার বলেন, ‘নদী নাব্যতা হারিয়ে ফেলছে। এই সময়ের পানি ধারণ করতে না পেরে ফুলেফেঁপে উঠছে। ’ ভারত থেকে নেমে আসা বালু-পলিতে ভরাট হয়ে যাওয়া নদ-নদী, পলি ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি নিয়ে ভারতের সঙ্গে আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংলাপের প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।