রাজশাহীতে অপরাধী শনাক্তকরণে গতিশীলতা এনেছে ফরেনসিক ল্যাব

উন্নয়ন ডেস্ক –

রাজশাহীতে নব প্রতিষ্ঠিত ফরেনসিক ল্যাবরেটরি চিহ্নিত অপরাধী সনাক্তকরণ ও অপরাধ প্রমাণ এবং নমুনা পরীক্ষা কার্যক্রমে গতিশীলতা এনেছে।

ঢাকা ও চট্টগ্রামের পর এবার বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)’র বিভাগীয় ল্যাবরেটরির একটি চার-তলা ভবন নগরীর পুলিশ লাইন কম্পাউন্ডে ২০২০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘রাজশাহীতে ল্যাবরেটরি স্থাপনের ফলে আমরা অনেক উপকৃত হচ্ছি। এছাড়া অপরাধ সংক্রান্ত বিভিন্ন পরীক্ষার রিপোর্ট দ্রুত পাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, যেহেতু খুব কম সময়ের মধ্যে পরীক্ষার রিপোর্ট পাচ্ছেন ফলে তারা আদালতে দ্রুত বিচারের জন্য চার্জ শিট দাখিল করতে পারছেন।
ওসি ইসলাম বলেন, তারা দ্রুত ভিসেরা রিপোর্ট পাচ্ছেন এবং ফিঙ্গারপ্রিন্ট রিপোর্ট থেকে লাশের পরিচয় শনাক্ত করতে পারছেন।

এই অঞ্চলের তদন্ত তরান্বিত হয়েছে উল্লেখ করে উক্ত পুলিশ অফিসার বলেন, ‘আগে ল্যাবরেটরির পরীক্ষা রিপোর্ট পেতে দীর্ঘ সময় লাগত এতে তদন্ত অনেক দেরিতে হত এবং অনেক ক্ষেত্রে প্রমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হত।’
এই অগ্রগতি এখাতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনছে। তিনি বলেন, ‘দুই/তিন বছর আগে আমরা ভিসেরা রিপোর্ট পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতাম। ঢাকা থেকে দেরিতে রিপোর্ট পাওয়ার কারণে যেকোনো তদন্ত দেরি হত।’
ল্যাবে ঘটনাস্থলের রাসায়নিক, অস্ত্র-সংক্রান্ত তথ্যাদি, ফিঙ্গারপ্রিন্ট, মাইক্রো বিশ্লেষণ, পায়ের ছাপ ও জাল নোট বিষয়ক তথ্যাদি পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া, ভিসেরা, মাদক ও এসিডসহ বিভিন্ন ধরনের টেস্ট সুবিধা এই রাসায়নিক ল্যাবরেটরিতে রয়েছে।

ঘটনাস্থলের আলামত সংগ্রহের জন্য একটি স্পেশাল ক্রাইম সিন ইউনিট এই ল্যাবে যোগ করা হয়েছে। সংগৃহীত প্রিন্টগুলো মেলানোর জন্য এবং তদন্ত তরান্বিত করার জন্য এতে আছে আঙ্গুল ও পায়ের ছাপ শাখা এবং হ্যান্ডরাইটিং বিশ্লেষণ ও ফটোগ্রাফি শাখা।

সিআইডি ল্যাব প্রধান স্পেশাল সুপারিনটেন্ডেন্ট অব পুলিশ, সোহেল আহমেদ বলেন, এই ফরেনসিক ল্যাব শুরু থেকে বিভিন্ন ঘটনার সত্যতা উদঘাটনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
তিনি আরও বলেন, এই ল্যাবরেটরিটি অত্যন্ত বিশেষায়িত এবং আন্তর্জাতিক মানের যন্ত্রপাতি দ্বারা সুসজ্জিত। এতে রয়েছে যেকোনো ধরনের রাসায়নিক ও ডকুমেন্টেশন বহন করার সক্ষমতা।
এই ল্যাবরেটরির বিভিন্ন শাখায় ফিঙ্গারপ্রিন্ট, হ্যান্ডরাইটিং, জাল নোট, ফটোগ্রাফি, ব্যালিস্টিকস, মাইক্রোসকোপিক ও পায়ের ছাপসহ বিভিন্ন তথ্যাদির সংশ্লিষ্ট চিহ্ন ও সিমটম পরীক্ষা করার পর নির্ভরযোগ্য রিপোর্ট দিতে আধুনিক মেশিনারিস ও ডিভাইজ সজ্জিত রয়েছে।
২০২১ সালে এর ফরেনসিক বিভাগে ৩৬৭টি মামলার ১২ হাজার ৬৯৯ নমুনা এবং রাসায়নিক বিভাগে ২৬ হাজার মামলায় ৩৯ হাজার নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।

এছাড়া, ২৯০ মামলায় ১,৭৩০টি অপরাধস্থল ও ৪১ টি লাশ ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে সনাক্ত করা হয়েছে।
রাজশাহী ও রংপুরে এবং পুলিশ রেঞ্জে মামলার আলামত এই ল্যাবে পরীক্ষা করা হচ্ছে। এই ল্যাব আলামত এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে পাঠানোর মত সময় ক্ষেপণ থেকে এবং হয়রানি কমাতে অবদান রাখছে।
সিআইডি কর্মকর্তারা বলেন, এই রাসায়নিক ল্যাবরেটরি এমনকি কবর থেকে তোলা মৃতদেহে মাদকদ্রব্যের উপস্থিতি বের করতেও সাহায্য করছে।
প্রাথমিকভাবে এই ল্যাবে ৫১ সদস্যের একটি দল মোতায়েন করা হয়েছে।