উন্নয়ন ডেস্ক –
সকাল সাড়ে ৯টা। রাজধানীর নীলক্ষেতের অদূরে গভর্নমেন্ট নিউ মার্কেটের বাইরের রাস্তায় অসংখ্য মানুষের হট্টগোল। কেউ ভ্যানগাড়িতে কেউ রিকশায় আবার কেউবা হাতে করে হালকা ও ভারী আসবাবপত্র তুলে নিয়ে যাচ্ছেন। কেউবা আবার টেলিফোন করে অন্যদের দুঃসংবাদ জানাচ্ছিলেন।
সেখানে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন আলী হোসেন নামের একজন ফুটপাতের ব্যবসায়ী। তিনি বলছিলেন, ‘নোটিশ না দিয়ে রাতের আঁধারে এভাবে পেটে লাথি মারল? আগে থেকে বললে শো-কেসগুলো অক্ষত পেতাম। এই ভাঙাচোড়া আসবাবপত্র নিয়ে কী করব?’
তার পাশে থাকা আরও কয়েকজন বললেন, ‘এমনিতেই করোনার কারণে গত পাঁচ মাস ব্যবসা নেই বললেই চলে। এ সময়ে গরিবের পেটে লাথি মারার বিচার আল্লাহই করব।’ এই বলে মালামাল সরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন সবাই।
সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, গভর্নমেন্ট নিউ মার্কেটের এক নম্বর গেটের বাইরে মোটরসাইকেল স্ট্যান্ডের সামনে ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের শো-কেস, টেবিল, চেয়ার, টুল ও রেকসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙাচোরা অবস্থায় পড়ে আছে।
মার্কেটের নিরাপত্তারক্ষীরা জানান, মার্কেট কমিটির সিদ্ধান্ত অনুসারে ফুটপাত ও মার্কেটের প্রতিটি দোকানের সামনে বারান্দার হকারদের আসবাবপত্র উচ্ছেদ করা হয়েছে। তারা জানান, মানবিক বিবেচনায় ফুটপাতের হকারদের বসতে দেয়া হলেও তারা ক্রমেই মূল দোকানের রাস্তা দখল করে বারান্দাসহ হাঁটাচলার জায়গাসহ দখল করে বসে পড়ে। ফলে পড়ায় মূল দোকানের প্রবেশপথ বন্ধ হয়ে ক্রেতাদের স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা বাধাগ্রস্ত এবং ব্যবসায় সমস্যা হচ্ছে। ক্রমেই ফুটপাতের দোকানের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা উচ্ছেদ করতে বাধ্য হয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিউ মার্কেটে ফুটপাতের ব্যবসার সঙ্গে এক শ্রেণির মালিকরা জড়িত। দোকানভেদে ফুটপাতের একেকটি দোকান সর্বাধিক ১০ লাখ টাকা অগ্রিম এবং মাসিক ২৫-৩০ হাজার টাকা ভাড়ায় দেয়া হয়। তারা দোকানের সামনে বারান্দা ভাড়া নিলেও পরবর্তীতে তারা আবার নিজেদের দোকান বসানোর পাশাপাশি সাবলেট দিয়ে থাকেন। ফলে মূল দোকান ঢাকা পড়ে যায়। এ নিয়ে দোকান মালিকদের যারা দোকানের সামনে ফুটপাত ভাড়া দেন না তারা দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছিলেন।
এর আগে বেশ কয়েকবার উচ্ছেদও করা হয়েছিল। কিন্তু কদিন না যেতেই আবার ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা ব্যবসা জমিয়ে বসে। মার্কেট কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এবার আগে থেকে কোনো ধরনের নোটিশ না দিয়ে রাতের আঁধারে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়।