উন্নয়ন ডেস্ক –
ঢাকা: মোবাইল ফোন চুরি বা ছিনতাই চক্রে চোর, মোবাইল ফোন বিক্রেতা, ব্যবসায়ী ও টেকনিশিয়ানরা জড়িত থাকেন। বর্তমানে মোবাইল ফোনের চাহিদা বেড়েছে এই সুযোগে মোবাইল ফোন চুরি-ছিনতাইও বেড়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (ডিবি) বিভাগ।
তবে মোবাইল ফোন চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনতে জোড়ালোভাবে অভিযান পরিচালনা করছে গোযেন্দা (ডিবি) পুলিশ। শুধু চোর বা ছিনতাইকারী নয়, চোরাই মোবাইল ফোন বিক্রেতাদের বিরুদ্ধেও কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি জানিয়েছেন ডিএমপি গোয়েন্দা (ডিবি) বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার (গোযেন্দা) এ কে এম হাফিজ আক্তার।
বুধবার (১৮ মে) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন গোয়েন্দা ডিবি পুলিশের এই মুখপাত্র।
এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, চোরাই মোবাইল বিক্রির কারণে চোররা অনুপ্রাণিত হয়। এই কারণে মোবাইল ফোন চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি ঘটছে। এছাড়াও মোবাইল ফোন চুরির ঘটনায় আসামি গ্রেফতার করা করা হলেও খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে আসামিরা ছাড়া পেয়ে যাচ্ছেন। এতে করে চোররা কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে একই কাজ করছেন।
এর আগে, ১৬ ও ১৭ মে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানাধীন বিভিন্ন এলাকায় ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ চোরাই মোবাইল উদ্ধারসহ চোর চক্রের ৮ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (ডিবি) উত্তরা বিভাগ।
গ্রেফতার চোর চক্রের সদস্যরা হলেন- মনির হোসেন (২৮), মো. মোতাহার হোসেন (৫৫), মো. সুরুজ হোসেন (২২), মো. শাহজালাল (২৩), মো. মেহেদী হাসান (২০), কুমার সানি (২৫), মো. হৃদয় (২৫) ও শামীম ওসমান (১৯)। অভিযানে তাদের কাছ থেকে ১৫৮ টি মোবাইল সেট ও ১ টি ল্যাপটপ এবং নগদ ১ লাখ ১৮ হাজার উদ্ধার করা হয়।
গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ২৯ এপ্রিল উত্তরা পশ্চিম থানাধীন ১০ নং সেক্টর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে নামাজ পড়তে গেলে মসজিদের অজুখানা থেকে এক ব্যক্তির ব্যবহৃত মোবাইল ফোন সেট চুরির ঘটনায় একটি মামলার তদন্তে গিয়ে এই চক্রের সন্ধান পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে মোবাইল চুরিসহ সংঘবদ্ধ চোর চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।
এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, রাজধানীতে মোবাইল ফোন চুরি ও ছিনতাই নিত্যদিনের ঘটনা। মোবাইল ফোন চুরি ও ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না তা নয়, তবে খুব দ্রুতই এসব ঘটনার মামলা নিষ্পত্তি হয়ে যায়। এ কারণে অপরাধীরা দ্রুতই ছাড়া পেয়ে যাচ্ছেন। তারা কারাগার থেকে বের হয়ে আবার একই কাজে লিপ্ত হচ্ছে।
গোয়েন্দা ডিবি পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, চুরি বা ছিনতাই করা মোবাইল ফোন সাধারণত তিনটি হাত বদল হয়ে থাকে। এক প্রাথমিক অবস্থায় চোর বা ছিনতাইকারী। তারা ৪-৮ হাজার টাকায় দ্বিতীয় হাতে বিভিন্ন মোবাইল মার্কেটে বা দোকানে বিক্রি করে দেয়। এরপর তারা ব্যক্তি বা ক্রেতাদের কাছে ১৫-৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে থাকে। আর যে সমস্ত মোবাইল ফোনে পাসওয়ার্ড লক বা ফাইন্ড মাই ফোনলোকেশন (Find my phonelocation) দেওয়া থাকে, সেসব চোরাই মোবাইলে এগুলো থাকে সেগুলো মোবাইল টেকনিশিয়ানরা পার্সগুলো আলাদা বিক্রি করে থাকে। এই তিন হাত বদলের ক্ষেত্রে পুরো চক্রটি বেশ কিছুদিন অপেক্ষা করেন।
মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী ও বিক্রেতাদের অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা পুরোনো মোবাইল ফোন বিক্রি করুন। কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু চোরাই মোবাইল ফোন কোনো ভাবেই বিক্রি বা মজুদ করা যাবে না। যদি কানো কাছে চোরাই মোবাইল ফোন পাওয়া যায় তবে তাদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেব।
চোরাই মোবাইল ফোন উদ্ধার অভিযান করতে গিয়ে দেখা গেছে, বর্তমানে আইফোনের প্রতি বেশি ঝোক তাদের। তারা চোরাই আইফোনের ইআইএমই নম্বর ফ্রাস দিয়ে পরিবর্তন করে বিক্রি করছে আবার দেশের বাইরেও পাঠাচ্ছে। আবার বিদেশি ইআইএমই নম্বর পরিবর্তন করা মোবাইল ফোনও বাংলাদেশে আসছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গ্রেফতার আসামিদের মধ্যে মোবাইল ফোন বিক্রেতা, টেকনিশিয়ান, চোর ও ছিনতাইকারীরা রয়েছেন।
তিনি বলেন, বর্তমানে মোবাইল ফোনের চাহিদা অনেক বেশি। এই কারণে রাস্তা-ঘাটে বা কোনো অনুষ্ঠানে মোবাইল ফোন বেশি চুরি বা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে থাকে।