করোনাকালীন স্মার্টফোন ও পিসি বিক্রির ধুম কি শেষ?

উন্নয়ন ডেস্ক –

করোনা মহামারী নিয়ন্ত্রণে নেয়া লকডাউনের ফলে স্মার্টফোন ও ব্যক্তিগত কম্পিউটার (পিসি) ক্রয় বাড়িয়ে দিয়েছিল গৃহবন্দি মানুষ। পেশাগত প্রয়োজন ও শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাস ও পরীক্ষার কারণে পিসি ও স্মার্টফোন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পণ্য হিসেবে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোয় পিসি ও স্মার্টফোন বিক্রি হ্রাসের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে বৈশ্বিক স্মার্টফোন ও পিসি বিক্রি কমেছে। এমনকি চীনা স্মার্টফোন জায়ান্ট শাওমি নিট লোকসানে পড়েছে। এছাড়া প্রধান ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ নির্মাতাদেরও বিক্রি কমেছে। খবর নিক্কেই এশিয়া।

মহামারীর বছরগুলোয় সেমিকন্ডাক্টর খাত সবচেয়ে চাঙ্গা থাকলেও সাম্প্রতিক মাসগুলোয়ও সেখানেও শ্লথগতি দেখা গেছে। গত এপ্রিলের দিকেই এমন আভাস দিয়েছিল শীর্ষ সেমিকন্ডাক্টর নির্মাতা কোম্পানি তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি (টিএসএমসি)। আয়-ব্যয়ের উপাত্ত প্রকাশের সময় টিএসএমসি সিইও সিসি ওয়েই বলেন, স্মার্টফোন, পিসি, ট্যাবলেট পিসি ও অন্যান্য পণ্যের চাহিদায় শ্লথগতি দেখা যাচ্ছে।

বাজার বিশ্লেষক সংস্থা কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চ বলছে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে বৈশ্বিক স্মার্টফোন বিক্রি বছরওয়ারি ৮ শতাংশ কমেছে। পুরো বছরে স্মার্টফোন বিক্রি ৩ শতাংশ কমে ১৩৫ কোটি ইউনিটে দাঁড়াতে পারে বলে পূর্বাভাস হংকংভিত্তিক সংস্থাটির।

বৈশ্বিক স্মার্টফোন বিক্রি হ্রাসে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে চীনের বাজারে শ্লথগতি। বৈশ্বিক স্মার্টফোন বিক্রির ২০ শতাংশের প্রতিনিধিত্বকারী চীনে গত কয়েক মাসে বিক্রি লক্ষণীয় পরিমাণে কমেছে। জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে চীনে শাওমির স্মার্টফোন বিক্রি কমেছে ২২ শতাংশ। যাত্রা শুরুর পর এই প্রথম বছরওয়ারি বিক্রি হ্রাস পেল শাওমির। এছাড়া চীনা স্মার্টফোন জায়ান্টটির নিট লোকসান হয়েছে ৫৮ কোটি ৭০ লাখ ইউয়ান বা ৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার।

নতুন করে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে চীনের কয়েকটি শহরে লকডাউন আরোপের ফলে বাজারে প্রভাব পড়েছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিআইএনএনও জানায়, এপ্রিলে চীনে স্মার্টফোন বিক্রি কমেছে ২২ শতাংশ।

স্মার্টফোনের সঙ্গে সঙ্গে পিসি ও টিভি বিক্রিও লক্ষণীয়ভাবে কমেছে। মহামারীর সময়ে পিসি ও টিভি ক্রয় বাড়িয়ে দিয়েছিল ঘরবন্দি মানুষ। কিন্তু জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে বৈশ্বিক পিসি বিক্রি ৫ দশমিক ৫ শতাংশ কমে ৭ কোটি ৮৯ লাখ ১০ হাজার ইউনিটে দাঁড়িয়েছে বলে জানায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গার্টনার। চলতি বছরের বাকি অংশেও পিসি বিক্রিতে শ্লথগতি থাকবে বলে মনে করেন শীর্ষস্থানীয় পিসি ব্র্যান্ড আসুসের উপশীর্ষ নির্বাহী হু শুবিন।

বাজার বিশ্লেষক সংস্থা ট্রেন্ডফোর্স জানায়, জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে বৈশ্বিক টেলিভিশন বিক্রি গত বছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকের চেয়ে ২০ শতাংশ কমেছে। বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির ফলে সীমিত আয়ের ভোক্তারা অগুরুত্বপূর্ণ পণ্য ক্রয় থেকে বিরত থাকছেন। ইলেকট্রনিকস পণ্যের সরবরাহ চেইনেও পরিবর্তনের চিহ্ন দেখা যাচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

চাহিদা বৃদ্ধির কথা মাথায় রেখে পেগাট্রন ও কমপ্যাল ইলেকট্রনিকসের মতো চুক্তিভিত্তিক নির্মাতা প্রতিষ্ঠান তাদের মজুদ বাড়িয়ে আসছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোয় বাজারে চাহিদায় শ্লথগতি দেখছে তাইওয়ানভিত্তিক কোম্পানিগুলো। মার্চের শেষ নাগাদ অন্তত দুই মাসের পণ্য মজুদ করেছিল তাইওয়ানের শীর্ষ পাঁচ কোম্পানি। কিন্তু বাজার থেকে কাঙ্ক্ষিত ক্রয়াদেশ পাচ্ছে না তারা। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চীনের লকডাউন। সাংহাই, কুনশান ও বেইজিংয়ের মতো ম্যানুফ্যাকচারিং হাবে সাম্প্রতিক লকডাউনে সরবরাহ চেইন বিঘ্নিত হয়েছে। চীনের কারখানাগুলো সীমিত সময়ের জন্য সচল থাকায় পরিকল্পনামাফিক পণ্য উৎপাদন ও জাহাজীকরণ করতে পারেনি চুক্তিভিত্তিক নির্মাতা কোম্পানিগুলো। এপ্রিলে পেগাট্রনের বিক্রি কমেছে ১৯ শতাংশ। কমপ্যালের বিক্রি কমেছে ৪০ শতাংশ।

সেমিকন্ডাক্টরের মোট চাহিদার ৪০ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব করে স্মার্টফোন ও পিসি খাত। গাড়ি, শিল্প যন্ত্রাংশ ও ডাটা সেন্টারের চিপ চাহিদা শক্তিশালী হলেও ভোক্তা ইলেকট্রনিকস খাতে শ্লথগতি এ শিল্পের জন্য নতুন মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।