চাকরি না পেয়ে কৃষিতে, এলাকায় এখন তার নাম ‘স্ট্রবেরি জাব্বির’

উন্নয়ন বার্তা ডেস্ক:

‘বেকার জীবন অসহ্য। নিজের পায়ে দাঁড়াতে না পারলে কোনো মূল্যই থাকবে না। তাই পড়ালেখা শেষ করে কিছু একটা করার ইচ্ছা থেকেই স্ট্রবেরি চাষের সিদ্ধান্ত নিই। আমার আশা স্ট্রবেরির চারা ও স্ট্রবেরি বিক্রি করেই একদিন স্বাবলম্বী হবো।’

এভাবেই নিজের স্বপ্নের কথা জানান জাব্বির হোসেন। ২০১৫ সালে তিনি সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর পাস করেন। লেখাপড়া শেষে অনেক চেষ্টা করেও চাকরি না পেয়ে কৃষিকাজ করার সিদ্ধান্ত নেন। আর তাতেই সফলতা ধরা দেয় হাতে।

জাব্বির হোসেনের বাড়ি বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার ভাটগ্রাম ইউনিয়নের চাকলমা গ্রামে। নিজের তৈরি স্ট্রবেরি ক্ষেতে জাব্বিরের সঙ্গে কথা হয় মিডিয়ার। জাব্বির এরইমধ্যে এলাকায় ‘স্ট্রবেরি জাব্বির’ নামে পরিচিতি পেয়েছেন।

বাজারে নেওয়ার জন্য ক্ষেত থেকে স্ট্রবেরি তুলছিলেন জাব্বির। কাজের ফাঁকে তিনি বলেন, ২০১৫ সালে লেখাপড়া শেষে চাকরি পাওয়াটা কঠিন হয়ে পড়ে। অনেক চেষ্টা করেও চাকরি না পেয়ে মনস্থির করি নিজ জমিতে কৃষিকাজ করার। যোগাযোগ করি নন্দীগ্রাম কৃষি অফিসে। সেখানে বিভিন্ন সময় কৃষির ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি।

প্রশিক্ষণ নিয়ে ২০২২ সালে পরীক্ষামূলকভাবে মাত্র ২০ শতক জমিতে ‘সুইট ব্ল্যাক’ বা কালো জাত এবং নতুন ‘গোল্ডেন ক্রাউন’ বা হলুদ জাতের তরমুজ চাষ করি। ৩৬ হাজার টাকা খরচ করে ৯৭ হাজার টাকায় বিক্রি করি।

এবার গ্রামের সবাইকে তাক লাগিয়ে গাজীপুর থেকে ১৮ হাজার ‘ফেস্টিবল’ জাতের স্ট্রবেরির চারা কিনে বাণিজ্যিকভাবে চার বিঘা জমিতে চাষ করেছেন তিনি। ফল পাকতে শুরু করেছে। ৬০০ টাকা কেজিদরে বিক্রি করছেন। স্ট্রবেরি তুলে বগুড়া ও ঢাকায় ফলের দোকানে পাইকারি বিক্রি করেন। এ ছাড়া নন্দীগ্রামের বিভিন্ন ফলের দোকানেও জাব্বিরের স্ট্রবেরি বিক্রি হচ্ছে।

এ পর্যন্ত তার ৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। লাভও আসতে শুরু করেছে। দুই মাসে ১৮ লাখ টাকার স্ট্রবেরি বিক্রি করা যাবে, এমনই স্বপ্ন জাব্বিরের। বর্তমান আবহাওয়া স্ট্রবেরি চাষের জন্য বেশ উপযোগী। তিনি আগামী বছর স্ট্রবেরি চাষের পাশাপাশি, চারা বিক্রি এবং স্থানীয় বেকার যুবকদের স্ট্রবেরি চাষের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন বলেও জানান।

জানতে চাইলে নন্দীগ্রাম উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. আদনান বাবু বলেন, নন্দীগ্রামে বাণিজ্যিকভাবে কেউ স্ট্রবেরি চাষ করেনি। জাব্বির একজন সাহসী চাষি। সবাইকে স্ট্রবেরি খেতে ও চাষ করতে উৎসাহ দিচ্ছেন। নিজেও স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। তিনি টিকে থাকলে আরও ভালো করতে পারবেন এবং তাকে দেখে অনেকে উদ্বুদ্ধ হবেন।