উন্নয়ন বার্তা ডেস্ক
চাঁপাইনবাবগঞ্জের মনাকষা ইউনিয়ন পরিষদের ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত ইউপি সদস্য শাহনাজ পারভীন। এছাড়া তার আরেকটি পরিচয় তিনি প্যানেল চেয়ারম্যান। তবে সব পরিচয় ছাড়িয়ে তিনি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন তার মূল পেশা নিয়ে। শাহাপাড়া বাজারে রয়েছে তার একটি চায়ের দোকান। সে চায়ের দোকান দিয়ে বেশ নাম কুড়াচ্ছেন তিনি।
৪৮ বছর বয়সী এ ইউপি সদস্য বলেন, প্রায় ৩২ বছর আগে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় শ্যামপুর ঘোনটোলা এলাকার সেরাজুল ইসলামের সঙ্গে। বিয়ের পরে আমাদের সংসারে জন্ম নেয় পাঁচ ছেলে মেয়ে। এর পর দীর্ঘ ২২ বছর ধরে আমাদের রেখে দ্বিতীয় বিয়ে করে অন্যত্র সংসার করছেন আমার স্বামী।
স্বামী ছেড়ে যাবার পর নিজের কোনো জায়গা জমি না থাকায় ছেলে-মেয়ে নিয়ে আশ্রয় নেই ভাসুরের বাড়িতে। একমাত্র উপার্জনক্ষম স্বামী ছেড়ে যাওয়ার পর চোখে অন্ধকার দেখি। আমার জীবনের সব কিছু যেন থমকে যায়। পরে বেঁচে থাকার জন্য শুরু করি ঝাল মুড়ির ব্যবসা। নেমে পড়ি জীবন সংগ্রামে।
প্রথমে স্কুল কলেজ এলাকায় ঘুরে ঘুরে ঝাল মুড়ি বিক্রি করতাম। সেখান থেকে কোনো রকমে সংসার চালিয়ে কিছু টাকা জমিয়ে কাপড়েরর ব্যবসা শুরু করি। শিবগঞ্জের পাইকারি বাজার থেকে কাপড় সংগ্রহ করে খুচরা বিক্রি করতাম। কাপড়ের ব্যবসা করে সংসার চালিয়ে পাঁচ ছেলে মেয়ের বিয়ে দেই। তারা এখন সবাই সাবলম্বী।
বড় ছেলে আমির চাঁদ ব্যাবসা করেন, দ্বিতীয় ছেলে নূর আমিন একই এলাকায় আরেকটি চায়ের দোকান চালান, মেয়ে লিশার বিয়ে দিয়েছি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায়। চার নাম্বার ছেলে রায়হান পানির পাম্পের মিস্ত্রি। ছোট ছেলে সিয়াম আমার সঙ্গেই থাকে।
প্রায় তিন বছর আগে সাহাপাড়া বাজারে মাসিক ১৬০০ টাকায় ভাড়া নিয়ে একটি টিনের ঘর তুলে চায়ের দোকান দেই। তখন থেকেই আমার দোকানের কাস্টমাররা নির্বাচন করার জন্য অনুরোধ করেন। তাদের অনুরোধেই প্রচারণা শুরু করি। ভাল ব্যবহার করে দ্রুত সময়ের মধ্যেই সবার মনে জায়গা করে নেই।
শাহনাজ পারভীন আরও বলেন, গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এলাকার লোকজনের সম্মতিতে আমি সংরক্ষিত ইউপি সদস্য (মেম্বার) পদে নির্বাচন করি। নির্বাচনে এলাকার মানুষ নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রচার প্রচারণা চালান এবং খরচ বহন করে। একই ওয়ার্ডে আরও পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। তাদের সবাইকে পরাজিত করে আমি বিপুল ভোটে জয়লাভ করি।
শপথ গ্রহণের পর থেকেই প্রায় দিনই ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদসহ বিভিন্ন জায়গায় মিটিং থাকে। সেগুলোতে অংশ নিতে হয়। যেদিন বাইরে মিটিং থাকে সেদিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে দোকান খুলে ঘণ্টাখানেক ব্যবসা করে চলে যাই। বাইরে কাজ শেষে আবার বিকেলে দোকান খুলতে হয়। কারণ চায়ের দোকান ছোট একটি অফিসের মত। সেখানেই থাকে চারিত্রিক সনদপত্রসহ জরুরি কাগজ পত্র। লোকজন আসে তাদের নানান সমস্যা নিয়ে। চা বিক্রির পাশাপাশি তাদেরও সমস্যার সমাধান করতে হয়।
এক বেলা দোকান না খুললে ঘুরে যেতে হয় মানুষকে। এতে মানুষ কষ্ট পায়। জনগণ যে প্রত্যাশা নিয়ে আমাকে নির্বাচিত করেছেন তার কিছুটা হলেও পূরণ করতে চাই।
মনাকষা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মির্জা শাহাদাৎ হোসেন খুররম বলেন, শাহনাজ পারভীন একজন দায়িত্ববান জনপ্রতিনিধি। তিনি তার সব দায়িত্বই ঠিকঠাকভাবে পালন করেন। সে জন্য তিনি অন্য সহকর্মীদের কাছেও বেশ জনপ্রিয়। তিনি সব শ্রেণি পেশার মানুষরে সঙ্গে খুব সহজেই মিশে যেতে পারেন। তাকে নিয়ে পুরো পরিষদ গর্বিত।
শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল হায়াত বলেন, একজন অসহায় নারীকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করে মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়েছে। এখন তার দায়িত্ব সবাইকে সমান মূল্যায়ন করা। সরকারের পক্ষ থেকে এলাকায় অসংখ্য মানুষকে প্রধানমন্ত্রীর ঘর উপহার দেওয়া হচ্ছে। অথচ তিনি অন্যের বাড়িতে বসবাস করলেও কোনো দিন নিজের জন্য কিছু চাননি। বিষয়টি ইতিবাচক। এখান থেকে সবার শিক্ষা নেওয়া উচিত।