জীবনযাত্রার ব্যয়ে শীর্ষে যেসব শহর

উন্নয়ন বার্তা ডেস্ক:
নিত্যপণ্যের দামসহ জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে বিশ্বজুড়ে। কভিডের প্রভাব কাটতে না কাটতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ডামাডোল এর বড় কারণ। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) এক জরিপে দেখা গেছে, গত এক বছরে বিশ্বের প্রধান শহরগুলোতে স্থানীয় মুদ্রায় জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে গড়ে ৮ শতাংশেরও বেশি হারে। এই হার গত ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
‘দ্য ইকোনমিস্ট’ পত্রিকার অঙ্গপ্রতিষ্ঠান দ্য ইকোনমিস্ট গ্রুপের গবেষণা ও বিশ্নেষণধর্মী বিভাগ ইআইইউ বেশ কয়েক বছর ধরেই গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। বিশ্বের ১৭২টি শহরের ওপর এবারের প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয় চলতি মাসের শুরুতে। এ জন্য দুইশর বেশি পণ্য ও সেবার দাম নিয়ে জরিপ চালানো হয় গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে।
ইআইইউর জরিপ অনুসারে, বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহর এখন সিঙ্গাপুর এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক। জীবনযাত্রার ব্যয়ের তালিকায় যৌথভাবে এবার শীর্ষস্থানে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ এ শহর দুটি। নিউইয়র্ক এই প্রথমবারের মতো এ তালিকার শীর্ষে উঠে এলো। গত বছর স্থানটি ছিল ইসরায়েলের তেলআবিব শহরের দখলে। তেলআবিব এবার তৃতীয় স্থানে নেমে গেছে।
এ তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে আছে হংকং শহর। পঞ্চম স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস। এর পরের অবস্থানগুলোতে রয়েছে যথাক্রমে সুইজারল্যান্ডের দুই শহর জুরিখ ও জেনেভা, যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো, ফ্রান্সের প্যারিস, ডেনমার্কের কোপেনহেগেন এবং অস্ট্রেলিয়ার সিডনি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, যে পদ্ধতিতে জীবনযাত্রার খরচের হিসাবটি করা হয়েছে তাতে শুধু উচ্চ মূল্যস্ফীতিই বিভিন্ন শহরে খরচ বেড়ে যাওয়ার একমাত্র কারণ নয়। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে মুদ্রার মান শক্তিশালী হওয়াও কোনো কোনো শহরের খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণ। ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার দরটি এ ক্ষেত্রে বিবেচনায় রাখা হয়েছিল। প্রতিযোগিতা ও উচ্চ চাহিদাও এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে।
গত এক বছরে জীবনযাত্রার ব্যয়ের র‌্যাঙ্কিংয়ে সবচেয়ে বেশি ওঠানামা করেছে এমন শহরগুলোরও আলাদা তালিকা প্রকাশ করেছে ইআইইউ। তাতে দেখা যায়, এক বছর সময়ের মধ্যে জীবনযাত্রার ব্যয়ের র‌্যাঙ্কিংয়ে সবচেয়ে বেশি ওপরের দিকে উঠে এসেছে রাশিয়ার রাজধানী মস্কো। গত বছরের ১২৫তম অবস্থান থেকে এক লাফে ৮৮ ধাপ পেরিয়ে এবার ৩৭তম অবস্থানে চলে এসেছে শহরটি।
এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে রাশিয়ারই আরেকটি শহর। গত বছরের চেয়ে ৭০ ধাপ এগিয়েছে সেন্ট পিটার্সবার্গ। ইউক্রেনে অভিযানের পর রাশিয়ার ওপর আরোপ করা পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশটির এই দুই শহরে জীবনযাত্রার খরচ অনেক বেড়েছে। এই তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টা। চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে যুক্তরাষ্ট্রেরই শার্লট ও ইন্ডিয়ানাপোলিস শহর।
র‌্যাঙ্কিং বা অবস্থানের ক্ষেত্রে নিচের দিকে নেমে যাওয়ার দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে যথাক্রমে সুইডেনের স্টকহোম, লুক্সেমবার্গ, ফ্রান্সের লিওঁ, জাপানের ওসাকা এবং যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার। এর মধ্যে স্টকহোম এবং লুক্সেমবার্গ তালিকায় ৩৮ ধাপ নিচে নেমে গেছে।
ইআইইউর জরিপে দেখা যায়, বড় শহরগুলোর মধ্যে জীবনযাত্রার ব্যয় সবচেয়ে কম সিরিয়ার দামেস্কে। ১৭২টি দেশের মধ্যে সর্বশেষ অবস্থানে রয়েছে শহরটি। এ ছাড়া লিবিয়ার ত্রিপোলি ১৭১, ইরানের তেহরান ১৭০, তিউনিসিয়ার তিউনিস ১৬৯ এবং উজবেকিস্তানের তাসখন্দ ১৬৮তম অবস্থানে আছে। স্থানীয় মুদ্রার মূল্যমান কমে যাওয়াসহ অর্থনৈতিক দুর্বলতাই এর প্রধান কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক বছরে তুরস্কের ইস্তাম্বুল, আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আয়ারস এবং ইরানের তেহরানে খুবই উচ্চ মূল্যস্ফীতি ছিল। তবে পণ্যমূল্য সবচেয়ে বেশি ছিল ভেনেজুয়েলার কারাকাসে। দেশটিতে জিনিসপত্রের দাম আগের বছরের তুলনায় ১৩২ শতাংশ বেড়েছে।