দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের তালিকা প্রকাশের দাবি যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের

উন্নয়ন ডেস্ক –

তদন্ত কমিশন গঠন করে ৭৫-এর ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে জিয়াউর রহমান ও খন্দকার মোস্তাকের মরণোত্তর বিচার ও হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রে পাকিস্তান, সৌদি আরব ও চীনসহ অন্যান্য দেশের সম্পৃক্ততা যাচাইয়ের দাবি জানিয়েছে বঙ্গবন্ধু পরিষদ যুক্তরাষ্ট্র শাখা।

শনিবার জাতীয় শোক দিবস ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে অনলাইনে জুম-এর মাধ্যমে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় পরিষদের নেতৃবৃন্দ এই দাবি জানান।

বক্তারা বঙ্গবন্ধুর জীবন ও আদর্শ, ১৫ আগস্ট নির্মম হত্যাকাণ্ড এবং পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন দলের ও নেতাদের ভূমিকা, বর্তমানে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে উন্নয়ন নিয়ে আলোকপাত করেন।

বঙ্গবন্ধু পরিষদ যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা ড. নুরুন নবীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের নেতারা অংশগ্রহণ করেন।

ড. নুরুন নবী বলেন, ১৯৭৫ সালে জিয়াউর রহমান সশস্ত্র বাহিনীর শপথ ভঙ্গ করেন, যা সশস্ত্র বাহিনীর আইনে মৃত্যুদণ্ডের অপরাধ। ষড়যন্ত্রের কথা ২০ মার্চ জানতে পেরেও জিয়াউর রহমান শপথ অনুযায়ী ষড়যন্ত্রের সংবাদ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেননি, প্রেসিডেন্টকে অবহিত করেননি, এমনকি ষড়যন্ত্রকারীদের গ্রেপ্তারও করেননি।

তিনি বলেন, খন্দকার মোস্তাক এই ষড়যন্ত্রের কথা ২ আগস্ট জানতে পারেন, কেবিনেট সদস্য হয়ে তিনি বঙ্গবন্ধুকে অবহিত না করে নিজেই ষড়যন্ত্রকারীদের সাথে হাত মেলান।

নুরুন নবী আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর, সংবিধানেরও অবমাননা করা হয়। প্রেসিডেন্ট মৃত্যুবরণ করলে সংবিধান অনুযায়ী সৈয়দ নজরুল ইসলামের দেশ পরিচালনা করার কথা ছিল। কিন্তু ক্ষমতালোভী মোস্তাক নিজেই ক্ষমতায় বসেন। এই ষড়যন্ত্রে আন্তর্জাতিক হাত রয়েছে কিনা তাও পরিপূর্ণ তদন্ত করে দেখা প্রয়োজন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বঙ্গবন্ধু হত্যার আগ পর্যন্ত সৌদি আরব ও চীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়নি। যেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয় সৌদি আরব ও চীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। এতেই বোঝা যায় ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের পরাজয়কে তারা মেনে নিতে পারেনি।

অন্যান্য বক্তারা বলেন, বঙ্গবন্ধু এমন একজন মহান নেতা ছিলেন যিনি সর্বস্তরের মানুষ এমনকি ধর্মীয় মৌলবাদীদের পর্যন্ত বাঙালি জাতীয়তাবাদে একত্রিত করতে পেরেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানিরাও হত্যা করতে পারত এবং পাকিস্তানে কারাগারে থাকা অবস্থায় পাশে কবর পর্যন্ত খোড়া হয়েছিল, কিন্তু তারা বঙ্গবন্ধুর মত বিশাল নেতাকে হত্যা করার সাহস করেননি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে বাঙালিরাই, যাদের অধিকার আদায়ের জন্য তিনি জীবনের সবকিছু বিসর্জন দিয়েছিলেন।

সভায় যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারের কাছে কয়েকটি দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হচ্ছে- তদন্ত কমিশন গঠন করে সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে জিয়াউর রহমান ও খন্দকার মোস্তাকের মরণোত্তর বিচার করা; তদন্ত কমিশনের মাধ্যমে ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রে পাকিস্তান, সৌদি আরব ও চীনসহ অন্যান্য দেশের সম্পৃক্ততা যাচাই করা; জিয়াউর রহমানসহ যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিত ও বঙ্গবন্ধুর খুনিদের নামের পূর্বে ‘শহীদ’ শব্দ ব্যবহার আইনত নিষিদ্ধ করা; জিয়াউর রহমানের কবরকে ‘মাজার’ বলা আইনত নিষিদ্ধ করা; রাষ্ট্রীয় সম্পদ সংসদ ভবনের জায়গা থেকে জিয়াউর রহমানের কবর অন্য কোথাও স্থানান্তর করা।

সভায় আরও বক্তব্য দেন যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের উপদেষ্টা ড. বামন দাশ বসু, সহসভাপতি ফাহিম রেজা নূর, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রাফায়েত চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক স্বীকৃতি বড়ুয়া ,বঙ্গবন্ধু পরিষদ ক্যালিফোর্নিয়া শাখার সভাপতি নজরুল আলম, সহসভাপতি শহীদ আলম, সহসভাপতি শওকত আলম, সাধারণ সম্পাদক রানা মাহমুদ, সদস্য রানা বড়ুয়া ও তপন মল, বঙ্গবন্ধু পরিষদ আটলান্টা শাখার সভাপতি সাংবাদিক রুমি কবির, সাধারণ সম্পাদক মাহবুব রহমান ভুঁইয়া, বঙ্গবন্ধু পরিষদ বোস্টন শাখার আহ্বায়ক সফেদা বসু, বঙ্গবন্ধু পরিষদ ওয়াশিংটন শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দস্তগির জাহাঙ্গীর, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি নিউ ইংল্যান্ড শাখার সভাপতি মাহফুজুর রহমান, মোহাম্মদ হোসেন রানা প্রমুখ।

এদিকে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে মেট্রো ওয়াশিংটন অওয়ামী লীগ এবং যুবলীগের যৌথ উদ্যোগে এক আলোচনা সভা ভার্জিনিয়ার ফলস্ চার্চের কাবাব কিং রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন সহসভাপতি মোহান্মদ শফিকুল আযম আজাদ। সার্বিক পরিচালনায় ছিলেন এম নবী বাকী। প্রথমেই মেট্রো ওয়াশিংটন আওয়ামী লীগ, যুবলীগসহ আগত অতিথিরা বঙ্গবন্ধু’র প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর বঙ্গবন্ধুসহ সকলের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয় এবং বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্টে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হয়।

আলোচনা সভার শুরুতেই ভিডিও কলের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ বক্তব্য রাখেন। ড. সিদ্দিক করোনা মহামারির মধ্যেও সশরীরে উপস্থিত হয়ে জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানান এবং জাতীয় শোক দিবসের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। সভায় মেট্রো ওয়াশিংটন ডিসির বিভিন্ন স্তরের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।