বেসরকারি কলেজের গভর্নিং বডিতে থাকতে পারবেন না সংসদ সদস্য

উন্নয়ন ডেস্ক –

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ফাজিল ও কামিল মাদ্রাসাসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডিতে সংসদ সদস্যদের সভাপতি হিসেবে নিয়োগ বা মনোনয়ন সংবিধানের মূল উদ্দেশ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে রায় দিয়েছে হাইকোর্ট।

রায়ে বলা হয়েছে, একজন সংসদ সদস্যকে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতে হয়। অপরদিকে গভর্নিং বডির সভাপতি নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পদমর্যাদা সংসদ সদস্যের নিচের পদমর্যাদার। সংশ্লিষ্ট এলাকার নির্বাচিত সংসদ সদস্য যদি গভর্নিং বডির সভাপতি হন তাহলে কার্যত উক্ত গভর্নিং বডি একটি একক ব্যক্তির প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে বাধ্য। কারণ নির্বাচিত সংসদ সদস্যের ওপর কথা বলার সাহস গভর্নিং বডির কোনো সদস্যের থাকে না এটাই বাস্তব সত্য।

বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দেয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়েছে।

হাইকোর্ট বলেছে, একজন সংসদ সদস্যকে তার প্রজ্ঞা ও জ্ঞান দিয়ে দেশের মানুষের কল্যাণের ও উন্নতির জন্য উন্নত জীবন যাপনের ব্যবস্থা করার জন্য সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রাখতে হয়। সংসদ সদস্য থেকে স্পিকার, প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করা হয়। সংসদ সদস্যরা হবেন জ্ঞানী, সাহসী, সৎ, নির্লোভ এবং দুরদৃষ্টি সম্পন্ন। তিনি কখনই তার পদমর্যাদার নিচের কোন পদে নিজেকে অধিষ্ঠিত করবেন না।

রায়ে বলা হয়েছে, একজন সংসদ সদস্যকে দেশের সকল মানুষের কল্যাণের জন্য যেমনি ভাবে ভালো ভালো আইন প্রণয়ন করতে হয় তেমনি ভাবে তার এলাকার সার্বিক উন্নয়নের জন্যও সার্বক্ষণিকভাবে নিজেকে নিয়োজিত রেখে দায়িত্ব পালন করতে হয়। সেজন্য গভর্নিং বডির সভাপতির পদ সংসদ সদস্যদের মহান পদের সাথে একেবারেই বিপরীত।

২০১৬ সালের ১৬ জুন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় স্থানীয় সংসদ সদস্য এস এম জগলুল হায়দারকে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার আতরজান মহিলা কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি পদে নিযুক্ত করে। ওই নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এসএম আফজালুল হক। ওই রিটের রুলের উপর চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে গত নভেম্বর মাসে রায় ঘোষণা করে হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার পূর্ণাঙ্গ এ রায় প্রকাশ পেয়েছে।

রায়ে হাইকোর্ট বলেছে, প্রত্যেক সংসদ সদস্য তার এলাকার কার্যত নির্বাচিত অভিভাবক, তিনি তার এলাকার অভিভাবক হিসেবে সকল গভর্নিংবডিরও অভিভাবক। তিনি কখনই গভর্নিং বোর্ডের সভাপতির পদ পাওয়ার চেষ্টা করবেন না। সংসদ সদস্যগণ তার নির্বাচিত এলাকাসহ সমস্ত দেশের উন্নয়নে নিবেদিত। আর গভর্নিং বডির সভাপতি শুধুমাত্র উক্ত প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে নিবেদিত।

রিট আবেদনকারীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. হুমায়ন কবির ইত্তেফাককে বলেন, এ রায়ের ফলে সংসদ সদস্যরা আর বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ফাজিল ও কামিল মাদ্রাসাসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডিতে সভাপতি হতে পারবেন না।