মূল্যস্ফীতি এবং অন্যান্য সংকট বিবেচনায় শ্রমিকদের মৌলিক চাহিদার পাশাপাশি পরিবারের চাহিদা পূরণ করতে পারে এমন একটি ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা। সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস) আয়োজিত পোশাক খাতে ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি বিষয়ে গোলটেবিল আলোচনায় এ আহ্বান জানান তারা। বৈঠকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, ‘বেঁচে থাকার মতো মজুরি না দিলে গার্মেন্টস শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। বেঁচে থাকার মজুরি কিন্তু আপেক্ষিক। আমেরিকার এক রকম আর আমাদের আরেক রকম। আমার মতে একজন শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ২০-২১ হাজার টাকা হতে হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি মানেই মালিকের মুনাফা কমে যাওয়া। কেউই কিন্তু তার আয় কমাবে না।
তাই যদি মুনাফা ঠিক রেখে মজুরি বাড়াতে হয় তাহলে সেটা করতে হবে আন্তর্জাতিকভাবে। বাইরের ক্রেতাদের কাছ থেকে ন্যায্য মূল্য আদায় করতে হবে। শ্রমিকের বাঁচার মতো মজুরি দিতে হবে। ২০ হাজার টাকার কম মজুরি দিলে একজন শ্রমিক পরিবার নিয়ে বাঁচতে পারে না। নারী ও পুরুষের মজুরি আলাদা করা যাবে না, এটা এক হতে হবে।’
বিএনপিএস’র নির্বাহী পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া কবীর বলেন, ‘নারীরা যখন মা হয় তখন তাদের সঠিক খাবার দেওয়া হয় না, তাই তাদের পুষ্টির অভাব হয়। একইভাবে নারীদেরকে মজুরিও কম দেওয়া হয়। কিন্তু নারীরা বাইরে কাজ করে আবার ঘরেও কাজ করে। তাই তাদের সমান অধিকার দরকার।
তিনি আরো বলেন, ‘দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে কৃষক এবং শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি দিতে হবে। গার্মেন্টসে শ্রমিকরা যে শ্রম দেয় তাদেরকে সে শ্রমের ন্যায্য অংশ দিতে হবে।’
জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক-কর্মচারী লীগের সভাপতি ও মজুরি বোর্ডের শ্রমিক প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, ‘আমাদের মজুরি ৩৭০ থেকে ৮ হাজার টাকায় এসেছে, এটা কিন্তু এতো সহজে আসেনি। এর জন্য আমাদের অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। এখন আমাদের মজুরি বৃদ্ধির জন্য গ্লোবাল ভয়েস তোলা উচিত। কারণ সারা পৃথিবীতে আমরা কেন কম মজুরিতে কাজ করব? ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়াতো কম মজুরিতে কাজ করে না। তাহলে আমরা কেন করব?’
এশিয়া ফ্লোর ওয়েজ অ্যালায়েন্স বাংলাদেশের সভাপতি কাজী রহিমা আক্তার সাথী বলেন, ‘পাঁচ বছর হয়ে গেলেও আমাদের মজুরি বাড়ানো হচ্ছে না। এদিকে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে সবকিছুর দাম বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু আমাদের মজুরি বাড়াচ্ছে না।’ ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ না করা পর্যন্ত আন্দোলন-সংগ্রাম অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন তিনি।