রুশ করোনার টিকায় স্নায়ুযুদ্ধের স্মৃতি, কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় ফাউসির

উন্নয়ন ডেস্ক –

গতকাল মঙ্গলবার নভেল করোনাভাইরাসের টিকা অনুমোদনের ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নিজেই এই ‘খুশির খবর’ দেন এবং জানান, তার মেয়েও এই টিকা নিয়েছেন। যদিও এই টিকার চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফল এখনো প্রকাশ করা হয়নি। ফলে রাশিয়ার এই টিকা নিরাপদ কিনা কিংবা এর কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. অ্যান্থনি ফাউসি।

এছাড়া স্নায়ুযুদ্ধ যুগে ১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর বিশ্বে মহাকাশে প্রথম পাড়ি দিয়েছিল সোভিয়েত কৃত্রিম উপগ্রহ ‘স্পুটনিক-১’। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘নাসা’কে টেক্কা দেয়ার সাফল্যে উদ্বেলিত হয়েছিল মস্কো। সেই লড়াইয়ের স্মৃতি ফিরিয়ে রাশিয়া করোনাভাইরাসের টিকার নামকরণ করেছে ‘স্পুটনিক ৫’।

এবিসি নিউজকে ফাউসি বলেছেন, ‘আমি আশা করব, রুশরা সত্যিই এবং নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করেছেন যে, টিকাটি নিরাপদ ও কার্যকর। আমি আসলেই সংশয়ে রয়েছি যে তারা এটা করতে পেরেছেন কিনা।’

দ্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এলার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিসেসের পরিচালক ফাউসি বলেন, একটি টিকা পাওয়া আর প্রমাণ করা যে এটি নিরাপদ ও কার্যকর- দুটি ভিন্ন বিষয়। তার কথায়, ‘আমাদের অর্ধডজন কিংবা তারও বেশি টিকা ট্রায়ালে রয়েছে। আমরা যদি অনেক মানুষের ক্ষতি করতে চাই কিংবা যা কাজ করে না তা তাদের দিতে চাই, তবে আমরা এটি শুরু করতে পারি! এমনকি আপনারা জানেন, চাইলে আগামী সপ্তাহ থেকেই তা হতে পারে। কিন্তু এটা কার্যসিদ্ধির উপায় হতে পারে না।’

ফাউসি জানান, রাশিয়া কিংবা চীনের মতো টিকা নিয়ে সাফল্যের ঘোষণা দেয়ার আগে তাদের অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রে বলবৎ নির্দিষ্ট নিরাপত্তা আর কার্যকারিতার মান অনুসরণের বিষয়টি মনে রাখতে হবে। এছাড়া চূড়ান্ত ধাপে মানবপরীক্ষা নিয়ে এখনো কোনো ধরনের তথ্যও প্রকাশ করেনি রুশরা।

দ্য ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) বলছে, কোনো টিকার কার্যকারিতা ৫০ শতাংশের কম হলে তারা সেটির অনুমোদন দেবে না।

মঙ্গলবার এক ইমেইল বার্তায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, টিকার ট্রায়ালের তথ্যাদি খতিয়ে দেখতে তারা রুশ বিজ্ঞানী ও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যমন্ত্রী অ্যালেক্স অ্যাজার বলেছেন, বিশ্বের ‘প্রথম টিকা’ তৈরি নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে কোনো ধরনের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত নন তারা। তার কথায়, ‘যুক্তরাষ্ট্রে যেকোনো টিকাই যেন এফডিএর মান অনুসরণ করে নিরাপদ ও কার্যকর হয় সেটি চাইব আমরা।’

টিকা তৈরির মিশন ‘অপারেশন ওয়ার্প স্পিড’কে অ্যাপোলো মহাকাশযানে চাঁদে মানুষ অবতরণের মিশনের সঙ্গে তুলনা করে অ্যাজার বলেন, বছর শেষে নিরাপদ আর কার্যকর টিকা পেতে আশাবাদী তারা। তিনি বলেন, ‘নজিরবিহীন ও ঐতিহাসিক গতিতে চলছে কর্মযজ্ঞ, অতীতে কখনই ধাপ-১ থেকে ধাপ-৩ এতটা কম সময়ে হয়নি, যতটা কম সময়ে করছে মডার্না। যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকার হলো, মানুষকে যে টিকা দেয়া হবে তা যেন নিরাপদ আর কার্যকর হয়।’

‘অপারেশন ওয়ার্প স্পিড’ এর অধীনে যুক্তরাষ্ট্রে ছয়টি টিকা তৈরির কাজ এগিয়ে চলেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে মডার্না। ১০ কোটি ডোজ পেতে মডার্নার সঙ্গে ১৫২ কোটি ডলারের চুক্তি সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার।

সূত্র: সিএনএন